নিজস্ব প্রতিনিধি, লামা :
প্রাণনাশের হুমকির শিকার হয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করায় লামায় রাতের অন্ধকারে এক কৃষকের বাগানের ২৫০০টি বনজ-ফলদ গাছের চারা ও ৬০ শতক জায়গায় রোপিত ধানের চারা উপড়ে ও কেটে দিয়েছে প্রতিপক্ষ।
মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী কৃষক সোহরাব হোসেন। এর আগে দুই দফায় হামলা চালিয়ে আরো প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির ৩ হাজার ৩০০ গাছের চারা কেটে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে প্রতিপক্ষ। উপজেলার লামা সদর ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি নকশার ঝিরি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রতিপক্ষ কর্তৃক একের পর এক হামলায় কৃষক সোহরাব হোসেন আতংকিত ও নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এসব হামলা ও জায়গা রক্ষায় প্রশাসনের জোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
জানা গেছে, লামা উপজেলার ২৯৫ নম্বর লামা মৌজার আওতায় নকশার ঝিরি এলাকায় বশির উদ্দিনের ছেলে মো. সোহরাব হোসেনের নামে ক্রয় সূত্রে ১৮৩ নম্বর হোল্ডিং মূলে ৫ একর ও ৮৪ নম্বর হোল্ডিং মূলে ৪.৮০ একর পাহাড়ি জায়গা রয়েছে। ওই জায়গাতে বহু কায়িক ও অর্থ ব্যয়ে বিভিন্ন ফলদ ও বনজ বাগানসহ খামার ঘর সৃজন করে গত ১৮-২০ বছর ধরে ভোগ করে আসছেন কৃষক সোহরাব হোসেন। সম্প্রতি পৌরসভা এলাকার রাজবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা মো. ওসমান ও ইব্রাহিম নামের দুই ব্যক্তি আর/৯১ নম্বর হোল্ডিংয়ের একটি কাগজ দেখিয়ে ওই জায়গা জবর দখল করার জন্য শুরু করেন নানান ষড়যন্ত্র। এর পরদিন কৃষক সোহরাব হোসেন স্থানীয় ৬ জনকে স্বাক্ষী করে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
এতে ইব্রাহিম ক্ষিপ্ত হয়ে শুক্রবার (১৪ আগস্ট) দিনগত রাতে সোহরাব হোসেনের জায়গার ওপর সৃজিত বাগানের দেড় হাজার কলা গাছ, এক হাজার সেগুনসহ বাঁশ গাছ, ৬০ শতক জমিতে রোপিত ধানের চারা কেটে ও উপড়ে ফেলে। এ সময় প্রতিবাদ করলে প্রতিপক্ষের লোকজন ঘর থেকে বের হলে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেন। এর আগে ১৬ এপ্রিল সকাল ৮টার দিকে ও ১২ মে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মো. ওসমান ও ইব্রাহিম লোকজন নিয়ে সোহরাব হোসেনের বাগানের সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৩ হাজার ৩০০টি গাছের চারা কেটে নিয়ে যায় মো. ইব্রাহিম। এতে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়। এসব ঘটনায়ও ১৮ মে থানায় মামলা করেন কৃষক সোহরাব হোসেন।
ভুক্তভোগী কৃষক সোহরাব হোসেন বলেন, একের পর এক হামলা ও গাছ কেটে ক্ষতি সাধন করার কারণে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। হামলা ও জায়গা জবর দখল চেষ্টা থেকে মুক্তি চাই।
মৌজা হেডম্যান হ্লাথোয়াই মার্মা বলেন, সোহরাব হোসেনের জায়গাতে না যাওয়ার জন্য ওসমান গণি ও মো. ইব্রাহিমকে নিষেধ করেছি। কারণ ওই জায়গা ১৮-২০ বছর ধরে সোহরাব হোসেন ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে আবাদ করে ভোগ করে আসছেন। কিন্তু তারা নিষেধ অমান্য করে জায়গাতে গিয়ে ঘটনার সৃষ্টি করছে।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত মো. ইব্রাহিম বলেন, কারো জায়গার গাছ কাটিনি। আমাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
লামা সদর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবদুল হাফিজ বলেন, জায়গা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে ইব্রাহিম গত শুক্রবার দিনগত রাতে কৃষক সোহরাব হোসেনের বাগানের প্রায় আড়াই হাজার কলা, সেগুন, বাঁশ গাছ ও ধানের চারা কেটে ও উপড়ে ফেলে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিয়েছি।
এদিকে লামা থানা পুলিশের উপ-সহকারী পরিদর্শক লিংকন দেব বলেন, কৃষক সোহরাব হোসেনের অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।