ফারুক হোসেন সজীব »
সে অনেকদিন আগের কথা। শান্তিপুর নামে একটি রাজ্য ছিল। সেই রাজ্যে বাস করতেন এক মহান রাজা। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী এবং বিচক্ষণ। তাঁর রাজ্য ছিল শান্তিপূর্ণ। তবে এক সমস্যা ছিল। রাজ্যের সমস্ত প্রজারা চাইত যে, তাদের রাজা আরও বিচক্ষণতা অর্জন করুক! যেন রাজ্যে আরও শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করে। রাজা প্রজাদের কাছে বুদ্ধি চাইলেন, কীভাবে তিনি তাঁর রাজ্যকে আরও সুখী ও সমৃদ্ধ করতে পারেন? কিন্তু প্রজারা রাজাকে তেমন কোনো বুদ্ধি দিতে পারল না। একদিন রাজা মন্ত্রীদের সাথে আলোচনায় বসলেন। সবাই পরামর্শ দিয়ে বলল যে, মহারাজ! আপনার রাজ্যকে আরও উন্নত করতে হলে আপনাকে হীরার মুকুট পরতে হবে! তাহলে আপনি অনেক শক্তি এবং বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হবেন।
রাজা বললেন, হীরার মুকুট পরলে কি সত্যিই সমস্ত কিছু বদলে যাবে? সকলেই একবাক্যে হ্যাঁ বললেন। রাজা মন্ত্রীদের কথা বিশ্বাস করে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি হীরার মুকুট পরবেন। এক সপ্তাহ পর, রাজা একটি দুর্দান্ত হীরার মুকুট পরলেন। যা এতটাই কারুকার্য খচিত এবং উজ্জ্বল ছিল যে, যে-ই দেখত সে-ই মোহিত হয়ে যেত। তারপর রাজা সে মুকুট পরে সমস্ত রাজ্যে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। কিন্তু কিছু দিন পর রাজা বুঝতে পারলেন যে, হীরার মুকুট পরার পরও রাজ্যের পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না। হঠাৎ তিনি তাঁর বিচক্ষণতা দিয়ে বুঝতে পারলেন যে, শুধু একটি মুকুট পরলেই তাঁর ক্ষমতা বা বুদ্ধিমত্তা বিকশিত হবে না। কেবল কর্মের মাধ্যমেই রাজ্যকে উন্নত করতে হবে।
তারপর রাজা সমস্ত প্রজাদের বাড়িতে গেলেন। তাদের সমস্যাগুলো শুনলেন। প্রজারা বলল, মহারাজ! আমাদের কৃষি জমিতে জল আসছে না। আমাদের সন্তানদের জন্য ভালো শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসা সুবিধাও অত্যন্ত কম। তাই দ্রুত কিছু একটা করুন।
রাজা ঠিক তখনি তার আসল কর্মটি বুঝতে পারলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, প্রথমে কৃষকদের জমিতে জলের ব্যবস্থা করবেন। তারপর শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি করবেন। এভাবে কয়েক মাস অতিবাহিত হবার পরই পুরো রাজ্যটি হঠাৎ বদলে গেল! কৃষকদের শস্য বৃদ্ধি হলো। স্কুলগুলোতে শিক্ষার মান বাড়ল। হাসপাতালগুলোতেও চিকিৎসাসুবিধা উন্নত হলো। তারপর রাজা তাঁর হীরার মুকুটটি একটি মন্দিরে দান করে দিলেন। রাজা বুঝতে পারলেন, প্রকৃত শক্তি ব্যক্তির কর্মের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। কেবলমাত্র কর্মের মাধ্যমেই ব্যক্তি নিজেকে সমাজ এবং দেশকে উন্নতির চরম উচ্চশিখরে নিয়ে যেতে পারে। আর বাহ্যিক বেশভূষা তো শুধুমাত্র লৌকিকতা মাত্র! লৌকিকতা কখনোই উন্নতির সোপান হতে পারে না!