বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে ভার্চুয়াল শীর্ষ বৈঠক শুরু হওয়ার আগে বাণিজ্য, জ্বালানি, কৃষিসহ ৭টি সমঝোতা স্বাক্ষর সই হয়েছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়াল আলোচনার শুরুতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর স্মারক ডাকটিকেট উন্মোচন, বঙ্গবন্ধুÑবাপু ডিজিটাল প্রদর্শনী এবং হলদিবাড়ি চিলাহাটি রেল সংযোগ চালু করেন।
শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেন দুই প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবেশির অগ্রাধিকার নীতির এক নম্বর স্তম্ভ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান মর্মে বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সীমান্ত হত্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বেগ প্রকাশ করলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে পুনরায় বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের আন্তরিক প্রতিশ্রুতি এবং তার সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা বলেন। সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী উপরোক্ত বক্তব্যসমূহ তুলে ধরেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বাকি ছয়টি নদীর পানি বণ্টন বিষয় আলোচনায় আসে বলে সাংবাদিকদের জানান। যৌথ ঘোষণায় ৬ নদীর পানি বণ্টনে অন্তর্বর্তী চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক করার কথাও এসেছে। সীমান্ত হত্যার বিষয়ে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, দু নেতা একমত হয়েছেন যে, সীমান্তে বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি উদ্বেগের বিষয়।
বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্রিকস ব্যাংকে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তিতে ভারতÑমিয়ানমারÑথাইল্যান্ড ত্রিদেশীয় মহাসড়কে যুক্ত হতে আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে যৌথ ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
করোনা মোকাবেলা এবং অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় ভারত ও বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে টিকা পাবে বলে ইতিপূর্বে সংবাদ মাধ্যমে খবর হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নরেন্দ্র মোদীকে আমন্ত্রণ জানালে তা সাদরে গ্রহণ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে যে সকল আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে তার দ্রুত কার্যকারিতা দেখতে চায় বাংলাদেশ। বিশেষ করে সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা বন্ধ, তিস্তাসহ আরো ৬টি নদীর পানি বণ্টন বিষয়ে চুক্তি, ভারতীয় ঋণের প্রকল্পগুলির সময়মতো দ্রুত সম্পাদন এবং রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রতি ভারতের জোরালো সমর্থন-এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট অগ্রগতি দেখতে চায় বাংলাদেশের মানুষ।
আমরা আশা করি বৃহৎ ও সৎ প্রতিবেশি হিসেবে ভারত বাংলাদেশের সমস্যাবলীর প্রতি আরো বেশি সহানুভূতিশীল হবে এবং দু দেশের বন্ধুত্ব ও চলমান সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ ও দৃঢ় করতে দু দেশই একসঙ্গে কাজ করবে।
মতামত সম্পাদকীয়