হাসপাতালে রোগী যায় না কেন

রোগীর তুলনায় হাসপাতাল কম বলে বিড়ম্বণার শেষ নেই বাংলাদেশের মানুষের। শহর থেকে গ্রাম সবখানের চিত্রই এক। সম্ভবত দেশের একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে চট্টগ্রামে রেলওয়ের বক্ষব্যাধি হাসপাতালটি। সংবাদপত্র সূত্রে জানা গেল, প্রায় চার বছর ধরে রেলওয়ের বক্ষব্যাধি হাসপাতালে কোনো রোগী ভর্তি হচ্ছেন না। ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর আগে রোগী ভর্তি হলেও সংখ্যায় ছিল খুবই কম। এই হাসপাতালের জন্য চিকিৎসক, নার্সসহ বিভিন্ন পদে ৫১ জন থাকার কথা। কিন্তু এখন আছেন ২২ জন। রোগী না থাকায় এ হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের পাশের আরেকটি হাসপাতালে নিয়োজিত করা হয়েছে। রোগীর অভাবে ৫৫ শয্যার হাসপাতালের ফটকে তালা দেওয়া থাকে সব সময়।
রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের যক্ষ্মারোগের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রাম শহর থেকে দূরে কুমিরায় একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে যক্ষ্মা কমে আসার পর ১৯৯২ সালে হাসপাতালটি কুমিরা থেকে চট্টগ্রাম নগরের সিআরবি এলাকার রেলওয়ে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এই হাসপাতালের পাশেই রয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর সিআরবি। রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যক্ষ্মারোগের চিকিৎসা আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে। এখন আর হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিতে হয় না। এ জন্য হাসপাতালে রোগী ভর্তি হচ্ছেন না। আবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় রোগীরাও এখানে ভর্তি হতে আস্থা পান না।
তবে এই হাসপাতালে রোগী না এলেও চট্টগ্রামে যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে চট্টগ্রাম জেলায় ১৫ হাজার ৯৯১ জন যক্ষ্মারোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ছিল ৬৬৬টি। ২০২১ সালে ২০ হাজার ৮৫৭ জন রোগী শনাক্ত হয়। ২০২০ সালে শনাক্ত হয়েছিল ১৪ হাজার ১১৬ জন।
বন্ধ এই হাসপাতাল বিশেষায়িত হাসপাতাল করার উদ্যোগ নিয়েছিল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এ জন্য গত বছরের ৬ মে হাসপাতালটি পরিদর্শন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক। তবে রেলওয়ের অনাগ্রহের কারণে জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগ আর এগোয়নি।
হাসপাতালের অভাবে যেখানে রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না সেখানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল হাসপাতালটি কার্যকর করা এবং সেখানে যাতে উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায়, সেটি নিশ্চিত করা। তা না করে বন্ধ করে রাখা কোনো অর্থেই যৌক্তিক নয়। এতে মানুষ চিকিৎসাবঞ্চিত হচ্ছেন। এমন গাফিলতি মেনে নেওয়া যায় না।