ঢাকার একটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হাসপাতালের এনআইসিইউতে ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভর্তি থাকা ৩৭৪টি নবজাতকের ওপর একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। তাতে দেখা যায়, ৯ শতাংশ তথা ৩২টি নবজাতক ত্বকে ক্যান্ডিডা অরিস বহন করছিল। একজনের রক্তেও সংক্রমণ হয়। এদের মধ্যে ১৪টি নবজাতক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময়ই ছত্রাকে আক্রান্ত ছিল। আর ১৮টি নবজাতক সংক্রমিত হয় ভর্তি হওয়ার পর। আক্রান্ত ৩২টি নবজাতকের মধ্যে রক্তে সংক্রমিতসহ সাত নবজাতকের মৃত্যু হয়। গবেষকরা বলছেন, এ ফল ইঙ্গিত দেয় যে এনআইসিইউর ভেতরেই প্রায়শ ছত্রাকটির সংক্রমণ ঘটছে। সাম্প্রতিককালে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয়ও ছত্রাক সংক্রমণের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে ক্যান্ডিডা অরিস।
দেশের হাসপাতালে নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) ক্যান্ডিডা অরিস নামের সম্ভাব্য এই প্রাণঘাতী ছত্রাক ছড়িয়ে পড়ছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। অরিস জাতের ছত্রাকটি একাধিক অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠায় একে ‘অতি জরুরি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হুমকি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। একে প্রতিরোধে বাড়তি সতর্কতা ও পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) যৌথ উদ্যোগে গবেষণাটি চালানো হয়েছে। অর্থায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ জনস্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গবেষণা জার্নাল মাইক্রোবায়োলজি স্পেকট্রামে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়।
গবেষণায় বলা হয়েছে সংগৃহীত ছত্রাকের নমুনার ৮২ শতাংশই ফ্লুকোনাজোল নামের একটি ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ছিল। অর্থাৎ নির্দিষ্ট এ ছত্রাকের চিকিৎসায় ওষুধটির কার্যকারিতা বিভিন্ন মাত্রায় কমে যেতে পারে। অথচ ক্যান্ডিডা অরিসের বিরুদ্ধে ফ্লুকোনাজোল প্রথম সারির ওষুধ হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। তাই ক্যান্ডিডা অরিসকে আইসিডিডিআর,বির বিশেষজ্ঞ ফাহমিদা চৌধুরী ‘সুপারবাগ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, সংক্রমিত নবজাতকদের ৮১ শতাংশেরই জন্ম হয়েছে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে ডেলিভারির মাধ্যমে। এতে নবজাতক তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ সময় হাসপাতালে অবস্থান করায় এ ছত্রাকের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আইসিডিডিআর,বি থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করে খবরে বলা হয়েছে, ক্যান্ডিডা অরিস এমন এক ধরনের ছত্রাক যা মানুষের ত্বকে কোনো লক্ষণ ছাড়াই অবস্থান করতে এবং দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারে। প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ অবস্থান সংক্রমণে রূপ নেয়; বিশেষ করে যখন এটি রক্তের মতো জীবাণুমুক্ত অংশে প্রবেশ করে এবং রোগটিকে অত্যন্ত প্রাণঘাতী করে তোলে।
এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে যাচ্ছে বলে আগেও সতর্ক করেছিলেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এখন তো গবেষণায় তা উঠে এলো। তবে এটি একইসঙ্গে বৈশ্বিক সমস্যাও। কাজেই বাংলাদেশ একা এর বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবে না। ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে উদ্যোগ নিতে পারে। তবে সেসঙ্গে দেশের হাসপাতালগুলোতে সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।



















































