কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইউনিট রয়েছে ৫টি। লেকে পানি কম থাকায় বতর্মানে একটি মাত্র ইউনিট চালু রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এতে জোয়ারের সময় কর্ণফুলী নদী হয়ে হালদায় প্রবেশ করছে লবণাক্ত পানি। হালদার পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় ওয়াসার দুটি প্রকল্পে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
ওয়াসার চালু প্রকল্পের মাধ্যমে পানি উৎপাদন হয় দৈনিক প্রায় ৫০ কোটি লিটার। কিন্তু হালদা নদীতে লবণ ও কর্ণফুলী নদীর পানির স্তর কমে যাওয়ায় বর্তমানে পানি উৎপাদন কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে দৈনিক প্রায় ৪৮ কোটি লিটারে। তাছাড়া মোহরা ও শেখ রাসেল পানি শোধনাগারে উৎপাদিত পানিতে লবণের উপস্থিতিও পাওয়া যাচ্ছে।
বৃষ্টি না হলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এ টি এম আব্দুজ্জাহের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বাভাবিক অবস্থায় কাপ্তাই লেকে পানি থাকে সর্বোচ্চ ১০৯ ফুট। চলতি মার্চে পানি থাকার কথা ৯২ দশমিক ৬৮ ফুট। কিন্তু বর্তমানে পানি আছে ৮৩ দশমিক ৬১ ফুট। পানি কম থাকায় কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে একটি মাত্র ইউনিট চালু রয়েছে।’
চট্টগ্রাম ওয়াসার মোহরা পানি শোধনাগার ও মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগারের মাধ্যমে হালদা থেকে পানি উত্তোলন করা হয় দৈনিক ১৮ কোটি লিটার। একইসময়ে রাঙ্গুনিয়ার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-১ এবং কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে কর্ণফুলী নদী থেকে পানি উত্তোলন করা হয় দৈনিক আরো ২৮ কোটি লিটার। কিন্তু গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ওয়াসার ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় হালদার পানিতে অতিরিক্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে। তাতে প্রতি লিটার পানিতে সর্বনিম্ন ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ২১০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণের উপস্থিতি মিলছে। বিশেষ করে অমাবস্যার ভাটার সময়ে লবণের পরিমাণ আরো বেশি মিলছে। এ অবস্থায় জোয়ারের সময় ৫ ঘণ্টা পানি উৎপাদন বন্ধ রাখছে ওয়াসা। তাতে কমে গেছে ওয়াসার পানি উৎপাদন। লবণের কারণে গত ৩ মার্চ ওয়াসার ৪টি প্রকল্পে পানি উৎপাদন কমেছে এক কোটি ৪ লাখ লিটার। এর আগের দিন ২ মার্চ উৎপাদন কমেছে এক কোটি ৯২ লাখ লিটার।
এ পরিস্থিতি এমনি এমনি তৈরি হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয়ের চিত্র এটি। গাছ কেটে বন উজাড় করা, পাহাড় কেটে ফেলা, নদী-খাল দখল-দূষণ করা ইত্যাদি কারণে বৃষ্টি কমে যাওয়া, প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন, বন্যা, সাইক্লোন, ভূমিকম্প বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি নদী ও ভূগর্ভস্থ পানিতেও লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে উপকূলীয় এলাকায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। লবণের মাত্রা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে। সেজন্য আমাদের সতর্ক হতে হবে এখন থেকেই। নতুবা বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।
এ মুহূর্তের সংবাদ