ফিলিস্তিন ভূ-খ-ের গাজা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ১১ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শেষে যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়েছে। এ যুদ্ধবিরতিকে দুপক্ষই তাদের বিজয় বলে অভিহিত করেছে। তবে মানবতার পরাজয় ঘটেছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে যুদ্ধবিরতি, একটি সুপ্রাচীন জনপদকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার যে রণউৎসবে মেতেছে ইসরায়েল তাকে বিচারের মুখোমুখি করা বিশ্বজনমতের মানবীয় কর্তব্য। এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৪৮, এদের মধ্যে ৭০ জন শিশু, আহত ১ হাজার ৯০০ জন। গাজা কর্তৃপক্ষের মতে প্রায় দেড় হাজার বসত বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বিধ্বস্ত হয়েছে, লক্ষাধিক মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে। মহামারির মতো মানবিক বিপর্যয় এখন গাজায়।
ইসরায়েলের হামলায় মদদ দিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলছেন দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানই ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের পথ। একই সঙ্গে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অপরিবর্তনীয় রয়েছে বলে তিনি জানিয়ে দেন। একদিকে তিনি ইসরায়েলের কাছে অস্ত্রবিক্রির বিপুল অংকের সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন, অন্যদিকে গাজায় যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় পুনর্গঠনে সাহায্যেরও প্রস্তাব দিয়েছেন। দুমুখোনীতি মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত জিইয়ে রাখছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গাজায় ত্রাণ সাহায্য, চিকিৎসা ও পুষ্টি সহায়তা দেবে বলেছে।
সংঘাত অবসানে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের কথা কয়েক দশক ধরে বলা হচ্ছে, জাতিসংঘের প্রস্তাব এবং অসলো শান্তি প্রস্তাবে দ্বি-রাষ্ট্রিক সমাধানের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও কার্যত এ লক্ষ্যে কোন অগ্রগতি হয়নি বরং ফিলিস্তিনে প্রতিদিন রক্ত ঝরেছে আর ইসরায়েলের অবৈধ বসতি গড়ে উঠেছে, ফিলিস্তিনিদের আবাসভূমি ক্রমশ সংকুচিত হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতারেস ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের দায়িত্ব সংঘাতের কারণ উদঘাটনে গুরুত্বের সঙ্গে সংলাপে বসা।
কিন্তু এ দায়িত্ব তো জাতিসংঘের, তাদের প্রস্তাবের বাস্তবায়ন তাদেরই করার কথা। বরং সংলাপে বসতে হলে বিবাদমান পক্ষসহ বৃহৎ শক্তিগুলোকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের সংলাপে যুক্ত করা এবং এই কাজটি দ্রুত শুরু করা উচিত। নতুবা যেকোনো ছুতায় যুদ্ধবিরতি বানচাল হয়ে পুনরায় সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে ফিলিস্তিন কার্যত বিভক্ত, পশ্চিম তীর এবং গাজায় দুটি কর্তৃপক্ষ শাসন করছে এবং এদের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য, আদর্শিক পার্থক্য রয়েছে বিশাল ব্যবধানে। গত ১৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনে নির্বাচন হয়নি, একটি গণতান্ত্রিক শাসন কাঠামো কিংবা ঐক্যমতের সরকার না থাকলে আলোচনা কিভাবে সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আরবলীগ কিংবা ওআইসি ফিলিস্তিনের দু কর্তৃপক্ষকে বিরোধ মীমাংসায় সাহায্য করতে পারে এবং একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করে ফিলিস্তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস জোরদার করতে পারে। মনে রাখতে হবে ঐক্যবদ্ধ, গণতান্ত্রিক ফিলিস্তিন দেশটির স্বাধীনতার জন্য অপরিহার্য উপাদান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও তা তখন গ্রহণযোগ্য হবে।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল বর্তমান সংঘাতের অবসান, সংঘাতে উভয় পক্ষের ক্ষয়ক্ষতি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সমাধান সামনে নিয়ে এসেছে। বিষয়টির সমাধানে সংলাপের অধ্যায়টি দ্রুত উন্মোচিত হোক-বিশ্ববাসী তা দেখতে চায়।
মতামত সম্পাদকীয়