সুপ্রভাত ডেস্ক »
চার ধাপের উপজেলা নির্বাচনের এখনও মাসখানেক বাকি। তবে এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সক্রিয় দেখা গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের। এবার দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে না, প্রার্থিতা উন্মুক্ত রেখেছে দলটি। দলের ভেতরে একক প্রার্থীর প্রতি সমর্থনের দাবি উঠলেও বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা এড়াতে ভোটে হস্তক্ষেপ না করতে দলীয় নেতা, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের নির্দেশনা দেয় আওয়ামী লীগ। তা উপেক্ষা করেই নিজের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ঈদের ছুটিতে বিভিন্নভাবে সক্রিয় রয়েছেন তারা।
প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের তফসিল ঘোষিত উপজেলাগুলোয় এই সক্রিয়তা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে।
একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে নিজেদের নির্বাচনি এলাকায় গেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা। জাতীয় নির্বাচনের পরের এই ভোটে নিজেদের পছন্দের উপজেলা চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্নভাবে সক্রিয় রয়েছেন তারা। এতে নির্বাচনি সংঘাত ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় আগেভাগেই এমন অবস্থান থেকে তাদের নিবৃত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। ফলে দলটির নেতা ও এমপি–মন্ত্রীরা ঈদের ছুটিতে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
ঈদের আগে–পরে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা, এমপি ও মন্ত্রীদের নির্বাচনি এলাকায় বেশ সক্রিয় দেখা যায়। এসব জেলা ও উপজেলায় শুক্রবার (১২ এপ্রিল) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোজায় ইফতার আয়োজন, অসহায়দের মাঝে খাবার ও বস্ত্র বিতরণ, ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়সহ নানা আনুষ্ঠানিকায় অংশ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা, এমপি–মন্ত্রীরা। এসবের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রতক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন, উৎসাহ ও কাজ করছেন তারা। এছাড়া অনানুষ্ঠানিক বিভিন্নভাবেও নানা চ্যানেলে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নিজস্ব লোকজনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির নেতা, এমপি ও মন্ত্রীরা।
এ নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষ করার অভিযোগও তুলেছেন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে সক্রিয় পক্ষগুলো বলছে, নেতা হিসেবে বা এমপি হিসেবে কিংবা মন্ত্রী হিসেবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যুক্ত থাকার চেষ্টা করেছেন তারা। এতে দোষের কিছু নেই, দলীয় নির্দেশনাও উপেক্ষা করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ও দুই সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকারের ভোটও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও শান্তিপূর্ণ করতে চায় আওয়ামী লীগ। সে জন্য সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখা এবং দলীয় প্রতীকে না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই নির্বাচনের আগেই বিভাগীয় নেতাদের ঢাকায় ডেকে এবং তারপর দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে নির্বাচনে নেতা, এমপি–মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা উপেক্ষ করলে, কোথাও বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা হলে আইনি এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয় শৃ্ঙ্খলা রক্ষা এবং নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে এবার কঠোর হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
প্রথম ধাপে দেশের ১৫২টি উপজেলা পরিষদে আগামী ৮ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষিত তাফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ১৫ এপ্রিল, বাছাই ১৭ এপ্রিল, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ২৩ এপ্রিল।
আর দ্বিতীয় ধাপে ১৬১টি উপজেলায় আগামী ২১ মে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী, এ ধাপে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ২১ এপ্রিল, মনোনয়ন বাছাই ২৩ এপ্রিল, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩০ এপ্রিল এবং প্রতীক বরাদ্দ ২ মে। এই নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে।
নির্বাচন কমিশন জানায়, দেশের ৪৮১টি উপজেলায় চার ধাপের নির্বাচন শুরু হবে ৮ মে, শেষ হবে জুনের প্রথম পক্ষে। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দুই ধাপের তফসিলও ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে, বিএনপি বর্জন করলেও নির্বাচনে অধিক সংখ্যক প্রার্থীর অংশগ্রহণ এবং ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না দেওয়া কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। সে কারণেই তৃণমূলে দলীয় বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতা এড়াতে দলীয় নেতা, এমপি–মন্ত্রীদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করার কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে।