দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার »
মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে এখন স্থানীয়দের কাছে রোহিঙ্গারাই বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, চোরাচালান, জাল নোট তৈরিসহ এমন কোন অবৈধ কর্মকা- নেই যে তারা করছে না। এখন এই জনগোষ্ঠী বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরির কারণ হয়ে উঠছে। শুধু পরিবেশগত ক্ষতি নয়, দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ঝুঁকি বাড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা। তাদের বসবাস শুরুর পর থেকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ অঞ্চলে ডায়রিয়া-কলেরা, ডেঙ্গু, হেপাটাইটিস-বি এবং সিসহ নানা রোগ বাড়ছে। বিশেষ করে এইচআইভি-এইডস রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ও সংশ্নিষ্ট বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইডস রোগীর হার বেড়েছে ৭০ শতাংশ। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এটি শনাক্ত শুরু হয় ২০১৫ সালে। রোহিঙ্গারা আসার পর ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারে ৫৩৮ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে ৩৯৫ জনই রোহিঙ্গা। এ বছরের জুন পর্যন্ত জেলাটিতে মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৫৪ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ৭৭১ জন (৮১ শতাংশ) এবং বাঙালি ১৮৩ জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭১০ জন, যেখানে রোহিঙ্গা ৬১২ জন এবং বাঙালি রয়েছেন ৯৮ জন। এ পর্যন্ত এইডস আক্রান্ত হয়ে জেলায় ৬১ জন রোহিঙ্গা ও ৫৭ জন বাঙালির মৃত্যু হয়েছে।
সারাদেশে গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৩৬৭ জনের দেহে এইডস শনাক্ত হয়েছে। এর ৩০ শতাংশই রোহিঙ্গা। এদিকে, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের ৭০ শতাংই কক্সবাজরের উখিয়া ও টেকনাফের। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত হাজারের বেশি রোগী রিফিউজি হেলথ ইউনিট থেকে চিকিৎসা নিয়েছে। যার বড় একটি অংশ ডেঙ্গু রোগী।
সংশ্নিষ্টরা বলছেন, মিয়ানমার থেকে অনেকে এইডস পজেটিভ হয়ে এলেও সামাজিক কুসংস্কার তথা লোকলজ্জার ভয়ে চিকিৎসার আওতায় আসছেন না। ফলে কেউ শনাক্ত হলেও এরই মধ্যে বিভিন্নজনের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিয়েছেন। পরিকল্পনা সেবার বাইরে রয়েছে অনেক পরিবার। তাদের মাধ্যমে ক্যাম্পেগুলোতে এইডস বেশি ছড়াচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম সংশ্নিষ্টদের দাবি, ভাইরাসজনিত রোগটি প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরপরও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংক্রমণ বেশি ছড়াচ্ছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের এআরটি অ্যান্ড এইচআইভি ফোকাল পারসন আশিকুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইডস আক্রান্তের হার বেশি হওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। তাছাড়া যে হারে রোগী বাড়ছে সেই হারে স্ক্যানিং করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকেই শনাক্তের বাইরে থাকছে। জীবিকার তাগিদে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ায় ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার থেকে অনেকেই এইডস নিয়ে এসেছে। এছাড়া ক্যাম্পে প্রতি বছর ৩০ হাজার শিশুর জন্ম হচ্ছে। আর এইডস সংক্রমণের যে কারণগুলো আছে, সেটা ক্যাম্পেগুলোতে বেশি। ফলে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু অসচেতনতা, লোকলজ্জার কারণে অনেকে রোগটি লুকিয়ে রাখছে। এছাড়াও অভাবের তাড়নায় অনেকে অনৈতিক কর্মকা-ে লিপ্ত হয়ে রোগটি আরো বেশি ছড়িয়ে দিচ্ছে।