চট্টগ্রামে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ‘লুমিনাল-এ’ টাইপের ক্যান্সার। যা হরমোনের প্রভাবে ধীরে বাড়ে এবং সময়মতো শনাক্ত হলে চিকিৎসায় ভালো সাড়া দেয়। নতুন এক গবেষণায় আরও দেখা গেছে, রোগীদের অর্ধেকের বয়সই ৫০ বছরের নিচে। অর্থাৎ তরুণ ও মধ্যবয়সী নারীদের মধ্যেও এই ক্যান্সারের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেশি। যা বিশেষজ্ঞদের নজর কেড়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ
স্তন ক্যান্সার, যা সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তার প্রবণতা আশ্চর্যজনকভাবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে এখন ৫০ বছরের কম বয়সী নারীদের মধ্যেই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে স্তন ক্যান্সার একটি প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও, বেশিরভাগ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে এর গড় আক্রান্তের বয়স মেনোপজের পরে। কিন্তু চট্টগ্রামের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো; এখানে অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নারীরা এই মরণব্যাধির শিকার হচ্ছেন। এর পেছনে জীবনযাত্রার দ্রুত পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, খাদ্যভ্যাসে অস্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়াজাত খাবারের আধিক্য, এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব—এইসব কারণকে প্রাথমিকভাবে দায়ী করা যেতে পারে। এছাড়া, পরিবেশ দূষণ ও কিছু ক্ষেত্রে বংশগত প্রবণতাও ভূমিকা রাখতে পারে।
এই অস্বাভাবিক প্রবণতার সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো—অল্প বয়সী নারীরা সাধারণত স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি সম্পর্কে ততটা সচেতন থাকেন না। ফলে, রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে না। যখন তারা ডাক্তারের শরণাপন্ন হন, ততক্ষণে রোগটি বেশ খানিকটা অগ্রসর হয়ে যায়, যা চিকিৎসাকে জটিল ও ব্যয়বহুল করে তোলে। জীবন বাঁচানোর হারও তখন কমে যায়।
এই নীরব বিপদ মোকাবিলায় প্রয়োজন একটি সুসংগঠিত এবং বহুমুখী উদ্যোগ। প্রথমত, সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে চট্টগ্রামের এই বিশেষ জনগোষ্ঠীর জন্য সচেতনতা কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। স্কুল, কলেজ ও কর্মক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ ও স্ব-পরীক্ষার গুরুত্ব নিয়ে নিয়মিত আলোচনা সভার আয়োজন করা আবশ্যক। দ্বিতীয়ত, স্ক্রিনিং সুবিধা সহজলভ্য করতে হবে। ৫০-এর নিচে নারীদের জন্য কম খরচে বা বিনামূল্যে ম্যামোগ্রাফি ও আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যবস্থা করা উচিত। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে একটি বিশেষ ‘নারীরোগ স্ক্রিনিং উইং’ স্থাপন করা সময়ের দাবি।
পাশাপাশি, স্বাস্থ্য গবেষকদের উচিত চট্টগ্রামের এই ব্যতিক্রমী প্রবণতার কারণ অনুসন্ধানে গভীর গবেষণা চালানো। কেন এই অঞ্চলে অল্প বয়সে ঝুঁকি বাড়ছে? এর পেছনের জেনিটিক বা পরিবেশগত কারণগুলি কী? সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে প্রতিরোধের কৌশল নির্ধারণ করা সহজ হবে।
স্তন ক্যান্সার শুধু একটি শারীরিক রোগ নয়, এটি পরিবারের ওপর অর্থনৈতিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। চট্টগ্রামের ৫০-এর নিচের নারীদের মধ্যে ক্যান্সারের এই উচ্চ হার আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নারীর স্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। এই অঞ্চলের নারীদের সুরক্ষার জন্য এখনই পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। এই নীরব বিপদকে রুখতে স্বাস্থ্যখাত, প্রশাসন এবং সমাজের প্রতিটি মানুষের ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহণ জরুরি।
মতামত সম্পাদকীয়



















































