সুপ্রভাত ডেস্ক »
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা এবং টেকসই অনুশীলনের মাধ্যমে অবকাঠামো-শিল্পে উন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা। এ সময় স্টিল, সিমেন্ট এবং এনার্জি খাতে দেশের কঠিন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন তারা। স্টিল-সিমেন্টের চাহিদার কথা উল্লেখ করে এ খাতে বিশেষ নজর দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
গত ১৪-১৫ মে ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাওঁ হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই দিনব্যাপী চতুর্থ আন্তর্জাতিক ট্রেড সামিট। বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ উদ্যোগে এ সামিটের আয়োজন করা হয়। ভারতের বিগমিন্ট থেকে সুমিত আগারওয়াল এবং বাংলাদেশের আহমেদ এন্টারপ্রাইজের দিলশাদ আহমেদ যৌথভাবে সামিটের আয়োজন করে। এতে বাংলাদেশ-ভারত ছাড়াও আমেরিকা, জাপান, জার্মান, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, ইউএই, পাকিস্তান, নেপাল ভুটানসহ ২৯টি দেশের ৫০০ প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
সামিটের প্রথমদিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। উদ্বোধক ছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
সামিটে স্টিল, সিমেন্ট ও এনার্জি বিষয়ে পৃথক সেশনে সংশ্লিষ্ট খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। তারা মনে করেন, অর্থনৈতিক নানা বাধার পরও এসব খাতে বাংলাদেশ আশাবাদী।
সামিটে বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিক্টার সোভেনডসেন, বিএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির আলী হুসেন, রহিম স্টিলের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন, পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, বিএসএমএ মহাসচিব ও আরআরএম চেয়ারম্যান সুমন চৌধুরী, রুয়েটের উপাচার্য মো. জাহাঙ্গীর আলম, অর্থনীতিবিদ ও বিএইচবিএফসি চেয়ারম্যান সেলিম উদ্দিন, পিএইচপি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আমির হোসেন সোহেল, সালাম স্টিলের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, সিএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান; জেডএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম, রহিম স্টিলের নির্বাহী পরিচালক মারুফ মহসিন উপস্থিত ছিলেন।
দুদিনের সামিটে ১৭টি সেশন অনুষ্ঠিত হয়; সেখানে বিশেষজ্ঞরা স্টিল, সিমেন্ট, পাওয়ার এবং এনার্জি, জাহাজ রিসাইক্লিংসহ ভারী শিল্পের চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। প্রথমবারের মত এই সামিটে সফলতার গল্প নিয়ে বিশেষ একটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে পিএইচপি ফ্যামিলির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মাদ মিজানুর রহমান তার ব্যবসায়ী জীবনের সফলতার পেছনের গল্প তুলে ধরেন। কিভাবে ১০০ টাকা থেকে শুরু করে আজকের বিলিয়ন টাকার গ্রুপে রূপান্তর করেছেন সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।
তৃতীয় প্রজন্ম বা যারা ব্যবসায় তাদের দাদার অবস্থানে আছেন সেই তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে আরেকটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তারা কিভাবে তাদের দাদার ব্যবসার প্রসার ঘটাতে চান; সেই পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
‘গ্লোবাল ফ্ল্যাট স্টিল মার্কেট ডাইনামিকস অ্যান্ড পার্সপেক্টিভস অন ইমপোর্টস’ শীর্ষক সেশনে প্যানেলিস্টরা ফ্ল্যাট স্টিলের বাজারের গতিশীলতার চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন। তারা বলেন, বাংলাদেশ কাঁচামাল আমদানির মাধ্যমে করে পণ্য তৈরি করে। অবকাঠামো, নির্মাণ এবং জাহাজ নির্মাণে অগ্রগতির কারণে ২০২৭ সালের মধ্যে ইস্পাত চাহিদা বার্ষিক ১৫ মিলিয়ন টনে পৌঁছাবে। কাঁচামালের স্বল্পতায় কারণে ফ্ল্যাট স্টিলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে; যা ব্যবসায় বাধা সৃষ্টি করছে।
‘প্রচলিত শক্তির উৎস এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্ভাবনা অ্যাক্সেস’ শীর্ষক আরেকটি অধিবেশনে বাংলাদেশের বর্তমান ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা হয়; যদিও লোডশেডিংয়ের মতো চ্যালেঞ্জগুলি রয়ে গেছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি, বিশেষ করে চাহিদার সর্বোচ্চ সময়ে।
দ্বিতীয় দিনে ‘বাংলাদেশের পাওয়ার সেক্টরে নতুন মোড়’ শীর্ষক অধিবেশনে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমাতে তেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানান। বর্তমানে অতিরিক্ত ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, শিল্প এলাকাগুলি ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের শিকার; মিলছে না মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ। এতে একদিকে রপ্তানিমুখী শিল্পকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে; অন্যদিকে বিদ্যুতের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। গ্যাসের ঘাটতি থাকার পরও গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বিদ্যুৎ খাতে প্রভাব ফেলেছে। আমদানি করা জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বিদ্যুৎ উৎপাদনকে ব্যয়বহুল করে তুলেছে।
‘হারনেসিং দ্য পটেনশিয়াল অফ গ্রিন শিপ রিসাইক্লিং’ শিরোনামের অপর অধিবেশনে জাহাজ ভাঙা শিল্পের উদ্যোক্তারা মার্কিন ডলার সংকটের কারণে এ শিল্পে অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা নেভিগেট করতে সরকারী নীতি সহায়তার আহ্বান জানান। সাম্প্রতিককালে পরিবেশগত এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি সহ বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্প ভারত ও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে বিশ^ দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য সুবিধা এবং কর্মীদের জন্য বীমা উল্লেখযোগ্য নজির স্থাপন করেছে। অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে ১৩০টির বেশি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিমেন্ট সেক্টরে কাঁচামাল সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ এবং উৎস বৈচিত্র্য’ শীর্ষক চূড়ান্ত অধিবেশনে বাংলাদেশের সিমেন্ট খাতের বিশ্বব্যাপী খ্যাতি তুলে ধরা হয়।