শাহজাদী সৈয়দা সায়েমা আহমদ »
সৈয়দ মঈনউদ্দিন আহমদ আলহাছানী মাইজভান্ডারী ১৯৩৮ সনের ১০ ফেব্রুয়ারি; ২৭ে মাঘ ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ৯ জিলহাজ্ব ১৩৫০ হিজরি জন্মগ্রহণ করেন। পিতৃকূলের দিক দিয়ে তিনি আওলাদে রাসুল হযরত গাউছুল আজম শাহছুফি মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) এবং তারই ফয়ুজাত প্রাপ্ত ভ্রাতুষ্পুত্র হযরত গাউছুল আজম শাহছুফি সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাভান্ডারী (ক.) এর মেজ শাহজাদা হযরত গাউছে জামান সুলতানুল মাশায়েখ সৈয়দ আবুল বশর আল মাইজভান্ডারী (ক.) এর তৃতীয় শাহজাদা হন। আর মাতৃকূলের দিক দিয়ে তিনি সাইয়েদেনা ইমাম হুসাইন (রা.)এর বংশধর হযরত মুফতি গরীবুল্লাহ আল হোসাইনী (রা.) এর পুত্র ফয়জুল বারী এর বিদূষী কন্যা সৈয়দা জাহানারা বেগমের সুযোগ্যো পুত্র ।
তাঁর শৈশব এবং প্রাথমিক স্কুল জীবন তাঁরই পিতা ও মাতার তত্ত্বাবধানে পবিত্র কোরআন হাদীসসহ আরবী, বাংলা, ইংরেজি ও ফার্সি ভাষার বিশেষ জ্ঞানের মাধ্যমে কাটে। ১৯৫৪ সনে কলেজিয়েট স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিক পাশ করেন। সরকারী কমার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন। উল্লেখ্য যে ছাত্রজীবনে তিনি রাজনীতিও করতেন।
১৯৫৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হাবিব ব্যংকে জেনেরাল ম্যানেজার পদে আসীন ছিলেন তিনি। যখন ব্যাংকিং ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত, ১৯৬২ সনের ৫ এপ্রিল বাবা ভান্ডারীর ২২ চৈত্রের ওরশের মধ্যরাতে ২.৩০ মিনিটে তাঁর আব্বাজান তাঁকে বায়াত এ খাস দান করেন অর্থাৎ তাঁকে দরবারের আশেকানদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন। সেই থেকে তাঁর আধ্যাত্মিক ও ত্বরিকার জগতে চলার শুরু। বাবা মঈনউদ্দিন আজ বিশ্বজগতের জ্ঞানী, গুণী লক্ষ কোটি আশেকানদের কাছে একটি অতি পরিচিত নাম। ধর্মীয় গোঁড়ামি, সংকীর্ণতা নয়, উদারতায় তিনি স্বস্তিবোধ করতেন।
১৯৮৮ সনে সুন্নিয়তের শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম গঠনে এবং বিভিন্ন আন্তধর্মীয় কোন্দল নিরসনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। দেশবরেণ্য আলেমÑওলামা, পীর মাশায়েখ ও গুণীজন তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে ‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত, বাংলাদেশ’ এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেন। তাঁরই বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ১৯৯২ সাল থেকে যথাক্রমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা শহরে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হয়ে আসছে।
এরপর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর পথযাত্রা শুরু। পাক-ভারত উপমহাদেশ, আরব অমিরাত, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, কানাডা, সিঙ্গাপুরসহ এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা প্রায় সবকটি মহাদেশেই তাঁর আদর্শে মুগ্ধ হয়ে এ যাবৎ অনেক অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ত্বরিকতের দীক্ষা গ্রহণ করে এবং ঐসব জায়গায় তিনি সকলের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেন মসজিদ, খানকা, ইবাদতখানা। বিভিন্ন এবাদতখানায় শিশু শিক্ষা, কুরআন শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষাসহ সুন্দর জীবন করার লক্ষ্যে তাসাউফভিত্তিক বিভিন্ন শিক্ষা পদ্ধতি চালু আছে। সদালাপী, মিষ্টভাষী ও নিরহংকারী এই মহান জ্ঞানতাপস অতি অল্পদিনের মধ্যেই বিশ্ববরেণ্য ইসলামী চিন্তাবিদদের দৃ্ষ্িট আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। ১৯৯৬ সনে আমেরিকায় অনুষ্ঠিত ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঝঁভর ঝুসঢ়ড়ংরঁস এ তাঁকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয় । ওহঃবৎহধঃরড়হধষ অংংড়পরধঃরড়হ ড়ভ ঝঁভরংস ঐ বছরই তাঁর মধ্যে বিদ্যমান শান্তি মৈত্রী ও সম্প্রীতি লক্ষ্য করে তাঁকেই ঐড়হড়ৎধনষব অফারংবৎ হিসেবে সাদরে গ্রহণ করেন। ২০০০ সনের ২৮Ñ৩১ শে আগস্ট জাতিংসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘গরষষবহরঁস ডড়ৎষফ চবধপব ঝঁসসরঃ ড়ভ জবষরমরড়ঁং ধহফ ঝঢ়রৎরঃঁধষ খবধফবৎং’ সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করে বিশ্বকে মদীনার সনদ অনুসরণ করতে আহ্বান জানান এবং মিলাদে মুস্তফা (সা.) এর শুভসূচনা সর্বপ্রথম তিনিই সুললিত কন্ঠে করেন যা ওখানে উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ ও আলোড়িত করে। একই সনে উজবেকিস্তান সরকার ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ডড়ৎশংযড়ঢ় ড়হ ঝঁভরংস ধহফ জবষরমরড়ঁং উধরষড়মঁব’ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন বিশেষ মেহমান হিসেবে। তাসখন্দ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, সমরখন্দ ও বুখারা শহরের মেয়রদ্বয় তাসখন্দ পররাষ্ট্র ও ধর্মমন্ত্রণালয় তাঁকে বিশেষ সম্বর্ধনা ও প্রদান করে। ২০০৫ সনের ২৭আগস্ট অভৎরপধহ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ওংষধসরপ গরংংরড়হ ভড়ৎ ডড়ৎষফ চবধপব ধহফ এযধহধ ঘধঃরড়হধষ ঈবষবনৎধঃরড়হ এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী সন্মেলনে – “ঞযব ডড়ৎষফ অসনধংংধফড়ৎ ভড়ৎ ওংষধস, টহরাবৎংধষ চবধপব, জবপড়হপরষরধঃরড়হ, ঝঢ়রৎরঃঁধষ টঢ়ষরভঃসবহঃ ধহফ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ড়ভ ঐঁসধহ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ অধিৎফ ড়ভ ঃযব উবপধফব ভড়ৎ ঃযব ুবধৎ ২০০৫”- অর্থাৎ বিশ্বে শান্তির দূতের সম্মাননায় তিনি ভূষিত হন। এ প্রাপ্তি সমগ্র জাতির জন্য বিরল। পরিশেষে এটাই বলব, তাঁর লিখিত ঞযব ডধু ড়ভ ঝধষাধঃরড়হ এ তিনি তুলে ধরেছেন ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর বৈশিষ্ট্য, উদ্দেশ্যাবলী, জিকির , দরুদ এর ফজিলত, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ,পবিত্র মেরাজ রজনী ও শবে বরাত, শবে কদরÑএরকম আরো অসংখ্য মানব মনের প্রশ্নাবলী ও তার সমাধান। এ মহৎ কাজ করতে গিয়ে অনেক বাধা তিনি অতিক্রম করেছেন সাহসের সাথে, আল্লাহর উপর বিশ্বাসী হয়ে এবং সফলকাম ও হয়েছেন।
তিনি মাÑবাবা, ভাইÑবোন, স্ত্রীÑপুত্র-কন্যা, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং বিভিন্ন দুর্যোগকবলিত হতদরিদ্র, অসহায় মানুষের পাশে থেকে মানবতার হক আদায় করেছেন। পবিত্র কোরানে আল্লাহ পাক বলেন: ‘সাবধান ! নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই, এমনকি তাঁরা সামান্যতম চিন্তাযুক্তও হবে না। ‘(সূরা ইউনুস ,আয়াত : ৬২)। আবার সূরা মুনাফেকুন এর ৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন : আর সন্মান তো আল্লাহর, তাঁর রাসুল ও মোমিনদের জন্যই কিন্তু মুনাফিকদের খবর নেই। ১০ ফেব্রুয়ারি তাঁর পবিত্র জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ ও সম্মান করতে আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন, আমিন।