সেরা অর্জনের বছরেও আক্ষেপ

সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »

ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টাতে উল্টাতে চলে যাচ্ছে আরো একটি বছর। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বিদয় নিচ্ছে ২০২১ সাল। অদৃশ্য মহামারি বিশ্বকে গ্রাস করলেও থামাতে পারেনি ক্রীড়াঙ্গনকে। বরং অন্যান্য বছরের তুলনায় একটু বেশিই ব্যস্ত সময় পার করেছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন। অন্যান্য খেলাধুলার মতো দম ফেলার ফুরসত ছিল না বাংলাদেশ ক্রিকেটেও। বছরটা সফলতা আর হতাশার মিশিলে কেটেছে টাইগারদের।

নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে ২০২১ সালে এসে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। দুই দলের বিপক্ষে এই সংস্করণে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সঙ্গে সফলতার পাল্লায় যোগ হবে আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা করে নেওয়ার বিষয়টি।

ব্যর্থতাও কম নয়। এ বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা ছিল ভরাডুবির। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টেস্ট সিরিজ হেরেছে দল। বছর শেষ করেছে পাকিস্তানের কাছে টানা দুই সিরিজ হেরে। অপ্রাপ্তির হিসেব কষলে করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ মাঠে গড়ায়নি ২০২১ সালে।

একটু পিছনে ফিরে তাকানো যাক-

ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল ২০২১  সাল শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। করোনাভাইরাসের মধ্যে কোন দল প্রথমবার খেলতে আসে বাংলাদেশে। এই সিরিজ দিয়েই ১ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরেন সাকিব আল হাসান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের ফেরার সিরিজে ৩-০ ব্যবধানেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় বাংলাদেশ। ফিরেই সাকিব ম্যান অব দ্য সিরিজ।

তবে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজটা একেবারেই ভালো যায়নি বাংলাদেশ দলের। ঘরের মাঠে হার ০-২ ব্যবধানে। এই চোটের কারণে এই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে পারেননি সাকিব। তবে তার আগেই আলোচনায় তিনি। দলের হয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে যেতে চান না, খেলতে চান আইপিএল। এ নিয়ে বেশ জল ঘোলা হয় সে সময়। যদিও পরে বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়ে যান সাকিব।

নিউজিল্যান্ড সফর

শ্রীলঙ্কায় যেতে না চাওয়ার সাকিব তার আগেই ছুটি নেন নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে। সে সময় সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে নিউজিল্যান্ড সফরে না যাওয়ার কথা জানান তিনি। বোর্ড না করেনি। সাকিবকে ছাড়াই টাইগাররা উড়াল দেয়। তবে মাঠের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। ওয়ানডে সুপার লিগের তিন ওয়ানডে ও তিন টি-টোয়েন্টি খেলতে গিয়ে তাসমান পারের দেশ নিউজিল্যান্ডের কাছে ৬ ম্যাচেই বাংলাদেশের হতশ্রী পারফরম্যান্স। কোন ম্যাচেই জয়ের স্বাদ পাওয়া হয়নি।

শ্রীলঙ্কা সফর

প্রাপ্তি কিছুটা মিলেছিল শ্রীলঙ্কায় গিয়ে। কোয়ারেন্টাইন ও জৈব সুরক্ষা বলয়ের কারণে শ্রীলঙ্কার ডাম্বুলায় দুই টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। প্রথমটা ড্র করলেও দ্বিতীয়টা হেরে যায়। দ্বিতীয় ম্যাচও বাংলাদেশ বাঁচাতে পারত। কিন্তু নিজেদের ভুলেই পারেনি। ডাম্বুলায় প্রথম টেস্ট ড্র করে বাংলাদেশ ৮ পয়েন্ট পায়। যা প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আসরে ছিল বাংলাদেশের একমাত্র প্রাপ্তি।

ঘরে ফিরে আবার শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি

টেস্ট সিরিজ খেলতে না যাওয়া সাকিব শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ছিলেন। এতে দলের শক্তিমত্তা বাড়ে। লাল বলে শ্রীলঙ্কার কাছে ম্যাচ হারের প্রতিশোধ বাংলাদেশ নেয় ঘরের মাঠে সাদা বলে। আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগের অংশ তিন ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জেতে অধিনায়ক তামিম ইকবালের দল।

আইসিসির মাস সেরা ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম

মে মাসে ব্যাট হাতে অনবদ্য মুশফিকুর রহিম। এর স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসির মাসসেরা পুরস্কার ওঠে তার হাতে। লঙ্কানদের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৭৯ গড়ে ২৩৭ রান করেন মুশফিক। পরে পাকিস্তানের হাসান আলি ও শ্রীলঙ্কার প্রবীণ জয়াবিক্রমাকে হারিয়ে সাবেক ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার ও সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক এবং ভক্তদের ভোটে মে মাসের সেরা নির্বাচিত হন তিনি।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের টেস্ট থেকে অবসর

প্রায় দেড় বছর পর জিম্বাবুয়ে সফরের একমাত্র টেস্ট দলে ডাক পান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১৬ মাস পর টেস্ট দলে ফিরেই মাহমুদউল্লাহর বাজিমাত। দলকে খাদের কিনারা থেকে উদ্ধার করে ১৫০ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটাই ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ হয়ে রইল। হঠাৎ অবসরের গুঞ্জন ওঠে। সতীর্থরা তাকে ম্যাচের শেষ দিনে গার্ড অব অনারও দেন। যদিও মাহমুদউল্লাহর সেই অবসর নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি।

সফরে অবশ্য বাজিমাত টাইগারদের। টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে সফর শেষ করে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

আইসিসির মাস সেরা ক্রিকেটার সাকিব

জিম্বাবুয়ে সফরে অপ্রতিরোধ্য সাকিব। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল মার্শ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়রকে পেছনে ফেলে আইসিসির জুলাই মাসের সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার হাতে তোলেন এই অলরাউন্ডার। সফরের একমাত্র টেস্টে ব্যাটিংয়ে সুবিধা করতে না পারলেও বল হাতে নেন ৫ উইকেট। প্রথম ওয়ানডেতে ৫ উইকেটসহ ৩ ম্যাচ সিরিজে ৮ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক হন সাকিব। এক ম্যাচে খেলেন অপরাজিত ৯৬ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস।

ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ

জিম্বাবুয়ে থেকে ফিরেই দম ফেলানোর ফুরসত নেই। এক জৈব সুরক্ষা বলয় থেকে আরেক জৈব সুরক্ষা বলয়। এবার ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। অজিদের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কখনোই দ্বিপাক্ষিক টি-টোয়েন্টিতে সিরিজে মুখোমুখি না হওয়া বাংলাদেশ দল নিকেদের দেড়ায় পেয়ে বাজিমাত করে। অজিদের রীতিমত মাটিতে নামিয়ে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয়।

ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজ

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এবার ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া মতো এই সিরিজটিও ৫ ম্যাচের। এই সিরিজেও বাজিমাত টাইগারদের। কিউইদের বিপক্ষে কুঁড়ি ওভারের ফরম্যাটের সিরিজ জয় ৩-২ ব্যবধানে। যদিও এই দুই সিরিজ নিয়ে সমালোচকদের কটু কথা শুনতে হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে। মন্থর উইকেটে ফায়দা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জেতার বিষয়টি অনেকেই ভালো চোখে দেখননি।

মিশন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্মৃতি টাটকা। টইটম্বুর আত্মবিশ্বাস নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশ দল। তবে হতশ্রী এক বিশ্বকাপ কাটাতে হলো টাইগারদের। স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে মিশন শুরু। এরপর ওমান আর পাপুয়া নিউ গিনিকে হারিয়ে কোনরকম প্রথম পর্ব পার করে সুপার টুয়েলভের টিকিট পায় অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। সুপার টুয়েলভে খুলতে পারেনি জয়ের খাতা। টানা ৫ ম্যাচে হেরে বিধ্বস্ত লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

ঘরের মাঠে পাকিস্তান সিরিজ

এবারের বিশ্বকাপ থেকে সবার আগে ঘরে ফেরা দলটির নাম বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টির বিশ্বমঞ্চে ভরাডুবির পর দেশের মাটিতে পা দিয়েই কদিন পর মুখোমুখি পাকিস্তানের। বছরের শেষ সিরিজটিও নিজেদের মতো করে রাঙাত পারেনি টাইগাররা। ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ০-৩ ব্যবধানে হারে। চ্যাম্পিয়নশিপের দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজেও একই পরিণতি। হার দুটোটেই।