নিজস্ব প্রতিবেদক »
পাঁচলাইশের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেবাগ্রহীতাদের অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এর মধ্যে রয়েছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সার্ভারের সমস্যা।
গতকাল সোমবার সকালে পাঁচলাইশের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সরেজমিনে দেখা যায়, পাসপোর্ট অফিসের গেটের সামনে ও আশেপাশে সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে অসন্তোষ। জেলা অফিসে চট্টগ্রামের সব উপজেলা থেকেই লোকেরা আসেন। অনেকে ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে যান। গতকাল তারা লাইনে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে দাঁড়ানোর পর অফিসের কর্মঘণ্টা শুরু হলে জানতে পারে, যার যা কাজ আছে তা নিয়ে পরের দিন অফিসে আবার আসতে। এরপরও মানুষ শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখছেন কাজ হয় কিনা। কেননা তাদের কাছে একদিন পর আসাটাই এক ধরনের ভোগান্তি। আর এ কারণে তারা গেটের বাইরে থেকে বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হন দায়িত্বরত আনসার ও পুলিশের সঙ্গে।
পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল কর্মঘণ্টা শুরুর পর থেকেই সকাল থেকে সার্ভারের যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণে পাসপোর্ট অফিসের সকল রকম সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। এমনকি আজও (মঙ্গলবার) ঠিক হয় কিনা তা নিশ্চিত বলতে পারছেন না কর্মকর্তারা। একজন আনসার সদস্য জানান, পাসপোর্ট অফিসের পাশেই একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ব্লাস্ট হওয়ায় সার্ভারের যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়েছে।
বাঁশখালী থেকে পাসপোর্টের আবেদন জমা দিতে আসা শরীফুল বলেন, ‘এখানে আবেদন জমা দিতে আসলে, পুরো দিন লাইনে দাঁড়িয়ে কেটে যায়। আমার বড় ভাইয়ের পাসপোর্ট করতে গিয়ে কি ভোগান্তি হয়েছিলো, তা দেখেছি। তাই আমি সকাল ছয়টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে এখানে এসে দেখি, মানুষ আমার আগে এসে লাইন ধরেছে। কিন্তু সকাল ৯টার দিকে ওরা (পাসপোর্ট অফিসের আনসার সদস্যদের দেখিয়ে) বলছে- আজকে (সোমবার) কাজ হবে না, সবাই কালকে (মঙ্গলবার) আসেন।’
পূর্ব ঘোষণা ছাড়া সেবা বন্ধ রাখার কারণ জানতে অফিসটির প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত উপপরিচালক তারিক সালমানের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে তার ফোনে একাধিকার কল করলে একবার কল ধরেন তার ব্যক্তিগত সহকারী শাহাদাত।
তিনি জানান, আমাদের সার্ভারের সমস্যার কারণে আজকে (সোমবার) সকল কার্যক্রম বন্ধ আছে। মূলত সার্ভারের যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ায় আবেদন গ্রহণ বা পাসপোর্ট ডেলিভারি সংক্রান্ত কোনো কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। ঢাকা থেকে টেকনিশিয়ানরা এসে এ সমস্যার সমাধান করবে। আশা করছি, আগামীকাল (আজ) থেকে সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক মো. সাঈদুল ইসলাম বলেন, ‘ওখানে ঠিক কি ধরনের সমস্যা হয়েছে তা নিয়ে আমার ঠিক জানা নেই। তবে সার্ভার সংক্রান্ত সমস্যা এখানেও প্রায় সময় হয়। এটি সেন্ট্রাল সার্ভারের সমস্যা না। এটা আমাদের লোকাল সার্ভারের সমস্যা। এটা প্রতিটি অফিসের জন্য আলাদা আলাদা রয়েছে। আর এ সমস্যাগুলো হলে গ্রাহকদের সেবা দিতে আমাদের বেশ অসুবিধা হয়। এ সমস্যা আমাদের সবগুলো অফিসেই হয়ে থাকে। এজন্য ঢাকা থেকে টিম প্রতিটি অফিসে গিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে থাকেন।’
তথ্যটি নিশ্চিত হতে ফোনে কথা হয় কক্সবাজার, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এ নিয়ে খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মোত্তালেব সরকার বলেন, ‘প্রতি তিন মাস পরপর এখানের সার্ভারসংক্রান্ত সফটওয়ার ও হার্ডওয়ারের মেইনটেন্যান্সের কাজ হয়। এ কাজ কর্মদিবসে হলে সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের সেবা দিতে বেশ কিছু অসুবিধা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারবে আমাদের হেড অফিস। কারণ এখানকার সবকাজ হেড অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী হয়ে থাকে।’
এ বিষয়ে কথা হলে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার উপপরিচালক শাহ মুহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ বলেন, ‘চট্টগ্রামের আঞ্চলিক অফিসে কি সমস্যা হয়েছে, তা আমি ঠিক বলতে পারছি না। কারণ আজ এ ধরনের কোনো ম্যাসেজ আমার কাছে আসেনি। তবে এটি ঠিক যে, তিন মাস অন্তর অন্তর অফিসগুলোতে মেইনটেন্যান্সের কাজ করা হয়ে থাকে। এ কাজের প্রসঙ্গে অফিসগুলো থেকে আমাদের কাছে তারা একটি ফরম্যাল চিঠি পাঠায়। এরপর ই-পাসপোর্ট প্রজেক্টে জার্মানির সহযোগী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে মেইনটেন্যান্সের জন্য লোক পাঠিয়ে তা ঠিক করা হয়। আমাদের বেশির ভাগ কাজ করে থাকে ফ্লোরা নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া আমরা নিজেদের একটি টিম তৈরি করছি। মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি আমরা খেয়াল রাখবো। এ ধরনের কাজগুলো কর্মদিবসে না করে ছুটির দিনে করার চেষ্টা করবো।’
এ মুহূর্তের সংবাদ

















































