ইবনুজ্জামান :
দেখুন আমার মেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছে। আমি চাই না তার লাশ কাটা ছেঁড়া হোক, এতে তার আত্মা কষ্ট পাবে।
প্রথমে আমরাও তাই মনে করেছিলাম। সরি! আমাদের কিছু করার নেই। ওনার হাজবেন্ড কোথায়?
জি! আমি, গ্রেইট! লেইটজ হ্যাভ অ্যা কাপ অফ টি ইন মাই অফিস।
সরি! বিকেল ৪ টার পর আমি চা খাই না। ঘুমের প্রব্লেম আছে।
অক্ইে, প্লিজ! কাম উইথ মি।
আপনার কি মনে হচ্ছে যে আমার স্ত্রীকে আমি খুন করেছি?
অফিসার, প্লিজ! আমাদের মনের অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করুন!
এখানে ময়না তদন্ত হোক, আপনারা দুজন আমার সাথে আসুন।
আজ দুপুরে রাফাজ সাহেবের মেয়ে রাইমা হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছে। কিন্তু থানার তদন্ত কর্মকর্তা এহসান প্রথমে তা ভাবলেও পরে তার এতে সন্দেহ জন্মে। তাই রাইমার স্বামী আসিফ এবং রাইমার বাবাকে থানায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
থানার ভেতরে মাইক্রোটা ঢুকতেই দুজন সিপাহী স্যালুট দিলো। সামনে গোলাপের বাগান। দুইজনকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করবে এহসান সাহেব। প্রথমে রহিমার বাবা তদন্ত কর্মকর্তার রুমে ঢুকলেন।
চা দিতে বলব?
আপনি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছেন?
ঠাট্টা তো আপনি করছেন! নিজের মেয়েকে খুন করেছেন টাকার জন্য!
কী সব বলছেন?!
মিসেস রহিমার ২০ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট ছিলো যার থেকে বেশ ভালো অ্যামাউন্টের টাকা আপনি চেয়েছিলেন। আপনার মেয়ে তাতে রাজি ছিলো না।
এহসান সাহেব সিগারেটের প্যাকেট থেকে এক শলাকা বের করে তা ধরিয়ে রাইমার বাবাকে একটা সিগারেট অফার করলো।
ধন্যবাদ! আমি ধূমপান করি না।
ধীরে ধীরে মুখ থেকে সিগারেটের ধোঁয়া বের করে জানালেন,
আপনি এখন আসতে পারেন।
এরপর রাইমার স্বামী আসিফ প্রবেশ করলো। তার কপাল ঘামছে। তদন্ত কর্মকর্তা তার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।
আপনি কী বেলী ফুলের পারফিউম ইউজ করেন?
হ্যাঁ!
ভালো কয়টা আছে আপনার কাছে।
এই একটাই।
ঘুমের প্রব্লেমের জন্য কি কোন মেডিসিন খাচ্ছেন?
জি!
আপনার স্ত্রীর কি কারো সাথে এ্যাফেয়ার ছিল?
দেখুন জিজ্ঞাসাবাদের নামে এসব গাঁজাখুরি কিছু আপনি বলতে পারেন না!
বেশ!
এহসান সাহেব আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে আসিফকে সিগারেট অফার করলেন।
আমি এই ব্র্যান্ডের সিগারেট খাই না।
পারফিউম কি আপনার স্ত্রী কিনে দেয়?
জ্বি!
গুড!
আসিফ বেশ চেঁচিয়ে বলে,
আপনি কি এসব নাটক বন্ধ করবেন?
আস্তে! এটা আপনার ড্রইং রুম নয়। নাটক আপনি করছেন। আপনি ঘুমের মেডিসিন নেন অথচ আপনার ঘরে ঘুমের মেডিসিন আমরা খুঁজে পাইনি। আপনার স্ত্রী এই ব্রান্ডের দুটি পারফিউম একসাথে কিনেছে যার রশিদ আমরা পেয়েছি অথচ আপনার কাছে এমন পারফিউম একটাই। আমরা আপনাদের বাড়িতে এমন দ্বিতীয় পারফিউম পাইনি। তাহলে আরেকটা পারফিউম কই? আর আপনি যদি এই ব্র্র্যান্ডের সিগারেট না খান তবে আপনার এ্যাশট্রেতে কীভাবে এই ব্র্যান্ডের আধপোড়া সিগারেট আমরা পেলাম?
আপনি কী বলতে চাচ্ছেন রাইমা হার্ট অ্যাটাক করেনি?
তা উড়িয়ে দিচ্ছি না। তবে তার সামনে হয়তো আপনি কিংবা আপনারা এমন কোন পরিস্থিতি তৈরি করেছেন যা তার হার্ট অ্যাটাকের কারণ!
প্লিজ! থামুন! আমি আর নিতে পারছি না। হ্যাঁ! আমার স্ত্রীর বিয়ের আগে একটা অ্যাফেয়ার ছিল! এটা নিয়ে আমাদের মাঝে প্রায় ঝগড়া হত। বিয়ের পরও আমার স্ত্রী অ্যাফেয়ারটা রেখেছিল।
চেয়ারে বেশ হেলান দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া আয়েশি ভঙ্গিতে ছাড়তে ছাড়তে বললেন,
আপনি এখন আসুন। আবার প্রয়োজন হতে পারে।
কয়েকদিন পর পত্রিকায় বড় বড় অক্ষরে ছাপা হলো ‘রহিমা’ খুনের সন্দেহভাজন রাইমার স্বামী, রাইমার বাবা ও তদন্ত কর্মকর্তা একই দিনে মারা গিয়েছেন। পুলিশ সব ভিক্টিমের রুমে বেলী ফুলের পারফিউম এবং সেই ব্র্যান্ডের আধপোড়া সিগারেট পেল যে ব্র্যান্ডের সিগারেট আরিফের অ্যাশ ট্রেতে ছিল। প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে ভিক্টিমদের মৃত্যু হার্ট অ্যাটাকে হয়েছে।