সুপ্রভাত ডেস্ক »
সাগরে দেশের তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ পেয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের গুরুত্বপূর্ণ বেসরকারি অংশীদার সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল, যা বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন-পেট্রোবাংলা মঙ্গলবার চিঠি দিয়ে সামিটকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। তবে সামিট এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা এ নিয়ে আপিল করবে। বর্তমানে দেশের দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের একটি পরিচালনা করছে সামিট। কক্সবাজারের মহেশখালীতে তৃতীয় টার্মিনালটি করার কাজ সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং লিমিটেডকে দিতে পেট্রোবাংলার প্রস্তাব ২০২৩ সালের ১৪ জুন অনুমোদন করে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ বিষয়ে গত ৩০ মার্চ পেট্রোবাংলা ও সরকারের সঙ্গে টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তি করে সামিট। এ টার্মিনাল থেকে দৈনিক ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি পাইপলাইনে সরবরাহ করা যাবে। সামিটের দ্বিতীয় টার্মিনালের চুক্তি বাতিলের বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সামিটের সঙ্গে করা টার্মিনাল ইউজ অ্যাগ্রিমেন্ট এবং ইপ্লিমেন্টেশন অ্যাগ্রিমেন্ট বাস্তবায়নের অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ায় এ চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। বন্ড সংক্রান্ত চুক্তির একটি শর্তের অগ্রগতিও সন্তোষজনক নয়। এসব কারণে চুক্তিটি বাতিল করা হয়েছে। পেট্রোবাংলার চিঠিতে বলা হয়, চুক্তির ২৭.১ (এ)(ও) ধারা অনুযায়ী জ্বালানি বিভাগের ৩ অক্টোবরের চিঠির আলোকে চুক্তিটি বাতিল করা হল। জাপানি কোম্পানি জেরার সঙ্গে যৌথ মালিকানায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবসা করে সামিট।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ আইনের অধীনে প্রকল্পগুলো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক প্রকল্প স্থগিত ও বাতিলের প্রক্রিয়াও চলছে। এসব প্রকল্পে জনগণের স্বার্থকে পাশ কাটিয়ে কোম্পানির স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের অভিযোগ। এরইমধ্যে সামিটের চেয়ারম্যান আজিজ খানসহ তার পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
তৃতীয় এলএনজি টার্মিনালের দায়িত্বেও সামিট
ব্যবসায়িক গোষ্ঠী সামিট গ্রুপের মালিকের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)। কোম্পানিটির মালিকানা হস্তান্তর স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে যৌথমূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছে এনবিআর। প্রথম বেসরকারি কোম্পানি হিসেবে ২০১৯ সালে বঙ্গোপসাগরের মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করেছিল সামিট, যেখান থেকে এখন দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস পাইপলাইনে যোগ হচ্ছে। মহেশখালিতে আরেকটি ভাসমান টার্মিনাল রয়েছে। সেটি পরিচালনার দায়িত্বে আছে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি। খবর বিডিনিউজ।
দ্বিতীয় টার্মিনালের চুক্তি বাতিল সংক্রান্ত পেট্রোবাংলার চিঠির বিষয়ে বিবৃতিতে সামিট দাবি করেছে, দেশের দীর্ঘমেয়াদী অবকাঠামো প্রকল্পগুলো দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সামিট গ্রুপের ‘প্রমাণিত ট্র্যাক রেকর্ড’ রয়েছে।সামিটের দ্বিতীয় ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) প্রকল্পের জন্য গত ৩০ মার্চ পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তি হয়েছে। একই দিনে পেট্রোবাংলার সঙ্গে সামিট প্রতি বছর ১.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি সরবরাহের জন্য ১৫ বছর মেয়াদী বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তি সম্পাদন করে, যা ২০২৬ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়ার কথা।’
দ্বিতীয় এফএসআরইউ টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তি বাতিলের নোটিস পাওয়ার কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে অনায্য ও বিধি বহির্ভূত মনে হয়েছে এবং আমরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করব।’