নিজস্ব প্রতিনিধি, সাতকানিয়া :
সাতকানিয়ায় সাঙ্গু নদীর ভাঙন রোধে বসানো সিসি ব্লক আড়াই মাস অতিক্রম না হতেই ধসে নদী গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। ফলে নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের মাঝে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন আতঙ্ক। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার ব্লক বসানোর স্থান থেকে বালু উত্তোলন করায় নদীর গভীরতা বৃদ্ধি এবং ব্লক বসানোর ড়্গেত্রে নানা অনিয়মের কারনে এমন দশা হয়েছে। উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের মৈশামুড়া নাপিতের টেক এলাকায় সাঙ্গু নদী ভাঙ্গনরোধ প্রকল্পের কাজে এ অনিয়মে ঘটনা ঘটেছে।
অপরদিকে ব্লক ধ্বসে পড়ার বিষয়টিকে পাত্তা না দিয়ে সংশিস্নষ্ট ঠিকাদার এটা কোন অনিয়ম নয় বরং স্বাভাবিক বিষয় বলে জানান।
জানা যায়, বিগত ২০১৮-১৯ আর্থিক সালে সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নের মৈশামুড়া নাপিতের টেক এলাকায় সাঙ্গু নদীর বাম তীরে প্রায় ১৯ কোটি ব্যয়ে ১৩শ’ মিটার নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরম্ন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সে অনুযায়ী এমআরসি নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে গত ২০১৮ সালে জুলাই মাসে কার্যাদেশ দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে কাজে শেষ করা কথা থাকলেও সংশিস্নষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করে তড়িগড়ি করে কাজ সমাপ্ত করতে গিয়ে নানা অনিয়মের আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি কয়েকদিনের টানা বর্ষণে সাঙ্গু নদীর স্রোত বৃদ্ধি পায় ফলে নদীর তীর সংরক্ষণ ব্লক বসানোর আড়াই মাসের মাথায় ওই ব্লকগুলো ধসে পড়ে।
স্থানীয় লোকমান হাকিম মো. আরিফ খান বলেন, এ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিসি ব্লক বসানোর কাজের শুরম্ন থেকেই অনিয়ম চলে আসছিল। যার কারণে ব্লক বসানোর কয়েক মাসের মধ্যে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
নদীর তীরের ভাঙ্গন পীড়িত বাসিন্দা মাস্টার জালাল উদ্দিন, কানুরাম চক্রবর্তী ও টিটু তালুকদার বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভাঙ্গন প্রতিরোধ বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরম্ন হলে আশায় অনেক বুক বেধেছিলাম। কিন’ কাজের শুরম্নতেই অনিয়ম হতে দেখেও মুখ খুলে কিছু বলতে পারিনি। এ অনিয়মের কারণে আজ ব্লক ধসে নদীতে বিলীন হচ্ছে। তাদের দাবি- যাতে আগামীতে ব্লক বসানোর কাজ সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষ নজরদারিতে রেখে শেষ করে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ব্লক বসানোর কাজে নিয়োজিত এমআরসি কন্সট্রাকশনের ঠিকাদার মনির আহমদ বলেন, ব্লক বসালে এ রকম পানির তোড়ে ধসে পড়াটা স্বাভাবিক বিষয়। এটা আমরা পরবর্তীতে মেরামত করে দেব এবং এটাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজের নিয়ম। এখানে কাজের ড়্গেত্রে কোন অনিয়ম হয়নি। অন্যদিকে ব্লক বসানোর স্থান থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে মনির আহমদ বলেন, নদী থেকে কোনো বালু উত্তোলন করা হয়নি। কাজের সিডিউল অনুযায়ী বালু ব্যবহার করে ব্লক তৈরি করা হয়েছে।
স্থানীয় নলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তসলিমা আকতার বলেন, কাজ শুরম্ন হওয়ার পর থেকে অনিয়ম চোখে পড়েছে। বিষয়টি সংশিস্নষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন সুরাহা পায়নি। ফলে এখন ব্লক নদীতে বিলীন হতে চলেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, ব্লক ধ্বসে যাওয়া অনিয়মের কোন বিষয় নয়। এখনো কাজটি শেষ হয়নি। জিও ব্যাগ এবং ঠেস ব্লক যা নদীতে ফেলার কথা ছিল তা এখনো ফেলা হয়নি। তাই বসানো ব্লক ধসে পড়েছে। আপতত নদী তীরের সড়ক রড়্গার্থে ব্লকগুলো দেয়া হয়েছিল। বৃষ্টি শেষে নিয়ম অনুযায়ী সকল কাজ সম্পন্ন করা হবে। ব্লক বসানোর স্থান থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন দেখবেন।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ-আলম বলেন, স্থানীয়রা আমাকে বিষয়টি মৌখিকভাবে অবগত করেছে। আমি বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপড়্গের সাথে কথা বলেছি।