দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার »
সাগরে আশানুরূপ মাছ না পেয়ে শূন্য ট্রলার নিয়ে সাগর থেকে ফিরছেন কক্সবাজার উপকূলের জেলেরা। এর ফলে হতাশ হয়ে পড়ছেন জেলে পরিবারগুলো। অনেকেই ট্রলারগুলো নোঙর করে রেখেছেন উপকূলে। জাল ফেললে মিলছে না ইলিশ ছাড়াও নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। ফলে তীব্র দাবদাহে সাগরে মাছ না পেয়ে বাধ্য হয়ে তাদের ফিরতে হচ্ছে উপকূলে। আর মৎস্য ব্যবসায়ীরা লোকসানে জর্জরিত হওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আদায়েও একরকম ধস নেমেছে বলে জানায় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর উপকূলে নোঙর করেছে এফবি নিশান নামে একটি ট্রলার। দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই এতে ফিরে আসা জেলে বশির, শাহেদ, রফিক ও আলীর।
জানা যায়, গত এক মাসে দুবার ১০ লাখ টাকা খরচ করে তারাসহ ২২ জেলে গিয়েছিলো সাগরে। কিন্তু সাগরে ধরা পড়েনি কোন সামুদ্রিক মাছ। শেষমেশ লোকসানের কারণে ট্রলার মালিক আর সাগরে মাছ শিকারে পাঠাচ্ছেন না জেলেদের। এখন কীভাবে সংসার চলবে বা কবে সাগরে মাছ শিকারে ফিরবেন তারা তা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
এফবি নিশান ট্রলারের জেলে বশির আহমেদ বলেন, ‘সাগরে গিয়ে ১০ দিন জাল ফেলেও মাছ মেলেনি। তাই বাধ্য হয়ে উপকূলে ফিরতে হয়েছে।’
আরেক জেলে শাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছি ১৫ জন জেলে। কিন্তু ১১ দিন জাল ফেলে অল্পকিছু মাছ পেয়েছি। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে বিক্রি করে পেয়েছি মাত্র ৬০ হাজার টাকা। সেই হিসেবে ট্রলার মালিকের লোকসান প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এখন ট্রলার মালিক আর সাগরে মাছ শিকারে পাঠাচ্ছেন না। তাই বেকার হয়ে পড়েছি।’
রাশেদ নামে এক মাঝি বলেন, ‘তীব্র গরমের কারণে সাগরের পানিও গরম হয়ে গেছে। তার ওপর সাগর উত্তাল। মাছ অনেক গভীরে চলে গেছে। তাই জাল ফেলেও মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।’
ট্রলার মালিকদের দাবি, তীব্র দাবদাহের পাশাপাশি সাগরে ট্রলিং জাহাজের দৌরাত্ম্যে মাছশূন্য হয়ে পড়ছে সাগর।
ট্রলার মালিক আজাদ রহমান বলেন, ‘সাগরে মাছ মিলছে না। এদিকে, তীব্র গরমের কারণে যেমন সাগরে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না, তেমনি ট্রলিং জাহাজের কারণে সাগর মাছশূন্য হয়ে পড়ছে। যেভাবে ট্রলিং জাহাজের ব্যবহার বেড়েছে সেক্ষেত্রে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় মাছশূন্য হয়ে পড়বে সাগর, এমন আশঙ্কা করছি।’
জানা গেছে, কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকার সামুদ্রিক মাছ বেচাকেনা হতো। অথচ সেখানে এখন সেখানে পন্টুন অনেকটা মাছশূন্য। বেকার সময় পার করছেন মৎস্য শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা।
মৎস্য ব্যবসায়ী আবু বক্কর বলেন, ‘মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ৩টি পন্টুন যখন সামুদ্রিক মাছে ভরে যায়, তখন মাছ বেচাকেনা হয় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার। কিন্তু এখন প্রতিদিন মাছ বিক্রি হচ্ছে এক কোটি টাকারও কম। এখন খুব বেকায়দায় আছেন পাাঁচ শতাধিক মৎস্য ব্যবসায়ী।’
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ বলছে, মাছের আকালের কারণে মৎস্য ব্যবসায়ীরা লোকসানে জর্জরিত হওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আদায়েও ধস নেমেছে।
কেন্দ্রের সহকারী হিসাব নিয়ন্ত্রক আশীষ কুমার বৈদ্য বলেন, ‘গেলো বছর এ সময়টাতে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন সেখানে খুবই কম টাকার মাছ বিক্রি হচ্ছে। বলতে গেলে প্রায় ৪০ শতাংশ মাছ বিক্রি হচ্ছে। যার কারণে রাজস্ব আদায়েও ধস নেমেছে।’