রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
মাছের প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় ৬৫ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। ২০ মে মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা। এসময় মাছের প্রজনন ক্ষেত্রগুলোতে জাল ফেলা যাবে না। তারই ধারাবাহিকতায় মিরসরাইয়ে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর। সাগরে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা মানতে করা হয়েছে মাইকিং। তবে জেলেদের দাবি সরকারের দেয়া সহায়তা এখনো পায়নি তারা।
উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মিরসরাইয়ে ২৯টি জেলেপাড়ায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ২ হাজার ২৬ জন। আরো ৬ শত জেলের একটি তালিকা নিবন্ধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে তালিকাটি এখনো অনুমোদন পায়নি। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রত্যেক জেলে দুই দফায় ৮৬ কেজি চাউল সহায়তা পাবে। নিষেধাজ্ঞাটি দুই অর্থবছরের মাঝামাঝি হওয়ায় চাল সহায়তাগুলো দুই দফা দেয়া হবে। তৎমধ্যে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রথম দফায় ৫৬ কেজি ও দ্বিতীয় দফায় ৩০ কেজি চাল দেয়া হবে।
এদিকে উপজেলার ডোমখালী ও সাহেরখালী জেলে পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, সাগর পাড়ে সারি সারি নৌকা বাঁধা রয়েছে। জাল ও নৌকা মেরামত করে দিন শুরু করেছে জেলেরা। অনেক জেলে সাগরে বেঁধে রাখা নৌকা পাহারা দিচ্ছে।
এসময় কথা হয় কাঁলাচান জলদাশে সঙ্গে। তিনি বলেন, তার পরিবারে ৪ জন সদস্য রয়েছে। স্থানীয় একটি এনজিও সংস্থা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে জাল কিনেছিলেন। কিন্তু সরকার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। তাই দৈনিক ৩শ’ টাকায় অন্য জনের কাছ থেকে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা ভাড়া নিয়ে অর্থের যোগানের চেষ্টা করছেন।
জানা গেছে, ডোমখালী জেলেপল্লীতে প্রায় ১শ’ জেলে পরিবার রয়েছে। তাদের পরিবারে প্রায় দেড় হাজার সদস্য। যারা শুধু সাগরে মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল।
স্থানীয় রাজু জলদাশ বলেন, আমার পরিবারে ৫ জন সদস্য রয়েছে। আগে সাগরে জাল ফেলে দৈনিক ২০০০-৩০০০ টাকা আয় হতো। স্থানীয় দুটি এনজিও সংস্থা থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। প্রতি সপ্তাহে ২ হাজার ১শ’ টাকা কিস্তি দিতে হয়। সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় কিভাবে কিস্তি পরিশোধ করবো ভেবে পাচ্ছি না।
সাহেরখালী ঘাটের জেলে হরিপদ জলদাশ জানান, জেলেরা দাদন ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নতুন নৌকা ও জাল কিনে থাকে। পরে মাছ বিক্রি করে ঋণের টাকা পরিশোধ করে। কিন্তু সরকার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া জেলেরা কিস্তির টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ জানান, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালনে জেলে পল্লীগুলোতে মাইকিং করা হয়েছে। প্রত্যেক জেলে পরিবারকে দুই দফায় ৮৬ কেজি চাল সহায়তা দেয়া হবে। আগামী সপ্তাহ থেকে চাল বিতরণ শুরু হবে।