সুপ্রভাত ডেস্ক »
বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এমবিডি) মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আর সেজন্য সম্মিলিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টাকেই গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষে তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আসুন আমরা এমডিবির মাধ্যমে দরিদ্র জনগণকে সহায়তা করে, একটি সমৃদ্ধ এবং দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে একত্রে কাজ করি। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত ‘উন্নয়ন সহযোগিতা: দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিস্থাপকতা এবং বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ভূমিকা’ শীর্ষক ইসিওএসওসি (ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল) প্যানেল আলোচনায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ওই আলোচনায় ধারণ করা ভিডিও বক্তৃতা দেখানো হয় বলে জানিয়েছে বাসস। কোভিড মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিতে ইসিওএসওসি’র ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ২০৩০ এজেন্ডা সফলভাবে বাস্তবায়নের ব্যাপারে অর্থায়ন সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসিওএসওসি’র ভূমিকার কথা স্বীকার করি।
বিশ্ব অর্থনীতি বর্তমানে বহুবিধ চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রথমত কোভিড-১৯ মহামারী এবং দ্বিতীয়ত রাশিয়া ও ইউক্রেইনের মধ্যে যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিস্ময়কর প্রভাব পড়েছে।
এই জটিল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দুর্বল অংশের স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তুলতে এবং বহুমাত্রিক সংকট মোকাবেলায় উন্নয়ন সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’
শেখ হাসিনা জানান, তার বিশ্বাস, ‘এমডিবি’ বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে একটি ‘ইতিবাচক’ পরিবর্তন আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এমডিবির অর্থায়ন বৈশ্বিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বহু-পক্ষীয় সংলাপকে যেমনি করে উৎসাহিত করবে, তেমনিভাবে এসডিজি অর্জনের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতকারী আধুনিক নীতিমালাকেও এগিয়ে নেবে। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডায় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখিত ম্যান্ডেটের সাথে এটা সঙ্গতিপূর্ণ।
টেকসই উন্নয়নে ‘এমডিবি’র ভূমিকা নিয়ে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়নে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং প্রযুক্তির মতো বৈশ্বিক জনবান্ধব পণ্য প্রচারের ক্ষেত্রে এমডিবিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
স্বল্পোন্নত দেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কারিগরি সহায়তা ও জ্ঞান বিনিময়ের ব্যবস্থা এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নে সহায়তা করার ব্যাপারে এমডিবিগুলো এক অনন্য অবস্থানে রয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার ব্যাপারে কাজ করার সময়, আমাদের অবশ্যই তাদের পূর্ণ সম্ভাবনাগুলো অন্বেষণের ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা মানতে হবে। এসবের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য, ডিজিটাল বিভাজন এবং উন্নয়ন বিভাজন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত উন্নয়নের মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদী স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমডিবির সুদের হার এবং পরিষেবা চার্জ বাড়ছে এবং এ ধরনের পদক্ষেপ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
এমতাবস্থায়, আমি এমডিবিকে এমন একটি ঋণ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা নির্ধারণ করার আহ্বান জানাতে চাই, যা আর্থিকভাবে কার্যকর হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং তারপর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা লাভ করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ, উন্নত এবং জ্ঞানভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়াই এখন লক্ষ্য।
কিন্তু বর্তমান ভূরাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের উন্নয়ন যাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মত দেশগুলোর সংকেট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা উচিত। আজ আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখী হচ্ছি, তা বহুমুখী এবং এসব মোকাবিলার জন্য একটি সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, বিশ্বকে এমন একটি পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে, যা বহুমাত্রিক ঝুঁকিকে বিবেচনায় আনে, লিঙ্গ সমতাকে এগিয়ে নেয়, সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করে এবং এমডিবির মাধ্যমে রেয়াতি ঋণের প্রসার ঘটায়। খবর বিডিনিউজ।
তিনি বলেন, একত্রে কাজ করার মাধ্যমে এবং এমডিবি’র সম্পদ ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে, আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য আরো টেকসই এবং সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করতে পারি।