সমুদ্র অর্থনীতির বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে

২০১২ সালের ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের (পিসিএ) রায়ের মাধ্যমে মিয়ানমারের সাথে মামলায় বাংলাদেশ প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি ও একই আদালতে ২০১৪ সালের ৮ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের কাছ থেকে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটারের সমুদ্রসীমার অধিকার পায় বাংলাদেশ। বলা হয়ে থাকে স্বাধীনতার পর এটি বাংলাদেশের আরেকটি বড় অর্জন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এতে দেশের পর্যটন, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ, প্রাকৃতিক সম্পদ, বাণিজ্য এবং জ্বালানি ক্ষেত্রে যে বিপুল সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছিল তার কিছুই এখনো অর্জিত হয়নি। এমনকি সঠিক কোনো কর্মপরিকল্পনাও নেওয়া হয়নি। অথচ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সমুদ্রতলের গ্যাস, মৎস্যসহ অন্যান্য সম্পদ আহরণ, বন্দরের সুবিধা সম্প্রসারণ ও পর্যটনের ক্ষেত্রে যথোচিত কার্যক্রম সম্পন্ন হলে ২০৩০ সাল নাগাদ সমুদ্র থেকে প্রতি বছর প্রায় আড়াই লাখ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব।
২০১২ সালে সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তির পর মিয়ানমার দ্রুততম সময়ে তাদের সামুদ্রিক ফসল ঘরে তোলে। মাত্র দুই বছরে তারা নতুন করে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের পাশাপাশি বাংলাদেশের সীমানা লাগোয়া তাদের ব্লক থেকে গ্যাস উত্তোলন শুরু করে। আর সেই গ্যাস দিয়ে এখন দেশটি তাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি গ্যাস রপ্তানিও করছে চীনে। ভারত এ যাবৎ ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আবিষ্কার করেছে বঙ্গোপসাগরে। দেশটি নিয়মিত গ্যাস উত্তোলনও করছে।
আমাদের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হবার পরে ২৬টি নতুন ব্লকে একে বিন্যাস করা হয়। এর মধ্যে ১১টিকে অগভীর ও ১৫টিকে গভীর সবার পরে ২৬টি নতুন ব্লকে একে বিন্যাস করা হয়। এর মধ্যে ১১টিকে অগভীর ও ১৫টিকে গভীর সমুদ্রের ব্লক হিসেবে স্থির করা হয়। জানা যায়, ২০১৯ সালে মাত্র ৪টি ব্লকে অনুসন্ধানের জন্য বিদেশি কোম্পানির সাথে চুক্তি হয়েছে। তা-ও আবার কাজ চলছে খুব ধীরগতিতে। একটি কূপও তখনো খনন করা হয়নি। বাকি ২২টি ব্লক খালি পড়ে থাকে। ২০২২ সালে এসে শুধুমাত্র বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানে জরিপ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখানে ন্যূনতম ১৭ থেকে ১০৩ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট (টিসিএফ) গ্যাস হাইড্রেটস মজুদ রয়েছে।
বাংলাদেশ এ বিষয়ে পিছিয়ে থাকলেও বিশ্বের অন্য দেশগুলো এই সুবিধা কাজে লাগাচ্ছে প্রতিনিয়ত। শুধু জ্বালানি নয়, সমুদ্রসম্পদকে কাজে লাগিয়ে প্রতি বছর তিন থেকে পাঁচ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে সমুদ্রকে ঘিরে। অস্ট্রেলিয়া এ খাত থেকে বছরে আয় করছে প্রায় ৪৭.২ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার। ২০২৫ সালের মধ্যে সমুদ্র অর্থনীতির আয়কে ১০০ বিলিয়ন ডলারে নিতে চায় দেশটি। সিঙ্গাপুরের জিডিপির ৪০ ভাগ সমুদ্রনির্ভর। চীনের মোট জিডিপির ১০ শতাংশ আসছে সমুদ্র অর্থনীতি থেকে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে অনেক আগেই তৎপর হওয়া উচিত ছিল। আমরা সমুদ্র বিজয় নিয়ে যতটা উল্লসিত হয়েছি, সে সম্পদ কাজে লাগাতে ততটা উৎসাহিত হইনি।