সমগ্র উপকূল ডাকাতমুক্ত ঘোষণা করা হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বঙ্গোপসাগরসহ সমগ্র উপকূলীয় এলাকাকে শিগগিরই ‘ডাকাতমুক্ত’ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় র‌্যাব-৭ সদর দপ্তরের এলিট হলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকার ৫০ জন জলদস্যুর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। খবর বিডিনিউজের।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী এবং কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া এলাকার আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত ১২টি জলদস্যু গ্রুপের ৫০ জন ৯০টি দেশি-বিদেশি অস্ত্র এবং ২৮৩ রাউন্ড গুলি ও কার্তুজসহ আত্মসমর্পণ করেছে। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের হাতে অস্ত্র-গোলাবারুদ জমা দিয়ে তারা আত্মসমর্পণ করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবনে আশির দশকের জলদস্যুতা, সন্ত্রাস, খুনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। সুন্দরবনের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন রক্ষা, মৎস্য ও বনসম্পদ সংরক্ষণ সর্বোপরি, সুন্দরবনকে বাঁচাতে সেখানে জলদস্যুমুক্ত করা হয়েছে।

২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী যে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেছিলেন, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, “শীঘ্রই আমরা বঙ্গোপসাগসহ সমগ্র উপকূলীয় এলাকাকে ডাকাতমুক্ত ঘোষণা করব। সেজন্য র‌্যাব, পুলিশ, কোস্ট গার্ড, বিজিবি, আনসারসহ সবাই আমরা একযোগে কাজ করব। দেশকে জঙ্গি, সন্ত্রাস ও ডাকাতমুক্ত করব।”

আকরাম হোসেন নামের একজন সাংবাদিকের মধ্যস্থতায় চট্টগ্রামের বাঁশখালী, কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া অঞ্চলের একজন নারীসহ ৫০ জন জলদস্যু এ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করেন।

র‌্যাব জানায়, আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুরা ১৯টি দস্যু বাহিনীর পাশাপাশি বিচ্ছিন্নভাবে দস্যুতা চালিয়ে আসছিলেন। তারা দেশি বিদেশি বিভিন্ন ধরনের ৯০টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২৮৩ রাউন্ড গুলি ও কার্তুজ জমা দিয়েছেন।

স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা জলদস্যুদের সাধুবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “জলদস্যুতা কখনো আপনাদের জীবনে শান্তি আনবে না। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমি ঘোষণা করতে চাই, যারা ফিরে আসেননি, মরণের চিন্তা ভাবনা করছেন… পরিণতি কী হবে সেটা মহান রাব্বুল আলামীন জানেন… আমরা কাউকে ছাড় দেব না।”

তিনি বলেন, “আমরা গুড গভর্নেন্স তৈরি করার জন্য বদ্ধপরিকর। যেকোনো মূল্যে সন্ত্রাস, জঙ্গি দমন করে আমরা এ অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে আনব। তারা যেন অপরাধ করার চিন্তা ভাবনা না করে সেটা আমাদের প্রচেষ্টা। যারা ফেরেননি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমরা আর কাউকে ক্ষমা প্রদর্শণ করব না। ভবিষ্যতে যদি আর কেউ সেরেন্ডার করেন সেটার কথা ভিন্ন।

এসময় তিনি পাবনা, সিরাজগঞ্জে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা চরমপন্থি এবং সুন্দরবনের দস্যুদের আত্মসমর্পণ করার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। তারা যাতে পুরানো পেশায় ফিরে না যায় সেজন্য তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। র‌্যাবের পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের বিশেষভাবে প্রণোদনা দিয়েছেন।

আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় মামলা আছে সেসব মামলা ছাড়া অন্যান্য মামলার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ মহাপরির্দশক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি র‌্যাব সফলভাবে পালন করছে। সুন্দরবনে জলদস্যুদের যে আস্তানা ছিল, র‌্যাবের মাধ্যমে তাদের আত্মসমর্পণের পর সেখানে সুন্দর পরিবেশ ফিরে এসেছে।”

আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের উদ্দেশ্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, “আপনারা পরিবারের কথা চিন্তা করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। কথার বরখেলাপ করলে কী হবে সেটা আপনারা ভালো করে জানেন। আমরা কঠোর হস্তে দমন করব।”

অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এমএ লতিফ, র‌্যাবের মহাপরিচালক ও এম খুরশীদ হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা অনুষ্ঠানে দেন।