সুপ্রভাত ডেস্ক »
দূর থেকে মনে হবে- সবুজ চাদরে ঢাকা পড়ছে পুরো মাঠ। কাছে গেলেই দেখা যায়, চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামকে খেলার উপযোগী করার কর্মযজ্ঞ।
একসময়ের পরিত্যক্ত ডোবা, বালুর মাঠ, গাড়ির গ্যারেজ, টং দোকানের আর অস্তিত্ব নেই। অবৈধ সব স্থাপনাও উচ্ছেদ হয়েছে।চারিদিকে পড়েছে বেষ্টনী।
উন্মুক্ত চত্বরে সবুজ ঘাস লাগানোয় ব্যস্ত মাঠকর্মী ইয়াছিন আরাফাত জাবেদ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ১১ হাজার বর্গফুট আয়তনের মাঠের মধ্যে ৮ হাজার বর্গফুটে হবে ফুটবল খেলার মাঠ।
‘এই মাঠকে খেলাধুলার জন্য তৈরি করা হচ্ছে। ঘাস লাগানো হচ্ছে। ঘাসগুলো বড় করতে নিয়মিত পানি ছিটানো হচ্ছে। মাঠের সামান্য অংশের কাজ বাকি, সেখানেও কয়েকদিনের মধ্যে ঘাস লাগানোর কাজ শেষ হবে’।
তবে আউটার স্টেডিয়ামের নকশা অনুযায়ী গৃহিত পরিকল্পনার অনেক কাজই এখনও বাকি। স্থপতি আশিক ইমরান এর নকশায় আছে- মাঠের চারপাশে ক্রিকেট নেট প্র্যাকটিস, ভলিবলসহ নানা খেলাধুলার জন্য ব্লক থাকবে।
সুইমিং পুলের দেওয়ালের দিকে হবে নেট প্র্যাকটিস ব্লক। স্টেডিয়ামের গ্যালারির দিকে ১৫০ থেকে ২০০ লোকের বসার জন্য গ্যালারি এবং সার্কিট হাউজ প্রান্ত ও নুর আহমদ চৌধুরীর প্রান্তে হবে ওয়াকওয়ে। এছাড়া বাকি জায়গায় টয়লেট সুবিধা, ড্রেসিং রুম এবং বসার জায়গা থাকবে।
চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে এক কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন জানিয়েছেন, আউটার স্টেডিয়ামের সংস্কারকাজ সম্পন্ন হবে দুই ধাপে। মাঠের চারপাশে ফেন্সিং দিয়ে প্রথম ধাপের কাজ শুরু করেছে টেন্ডারের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া প্রতিষ্ঠান।
তিনি জানান, আসন্ন বর্ষার আগেই বেশকিছু কাজের অগ্রগতি হবে। দীর্ঘদিন ধরে দখলদারদের হাতে থাকা এই স্টেডিয়াম খেলার উপযোগী করে নান্দনিকভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে, হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা হবে। সংস্কারের পর এই মাঠে খেলতে টাকা দিতে হবে না। তবে শৃঙ্খলার জন্য একটি সূচি অনুসরণ করা হবে।
এর আগে আউটার স্টেডিয়াম এলাকায় দুই পাশে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। খেলার মাঠ দখলমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অংশ হিসেবে এই উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হয়।
২০২৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আউটার স্টেডিয়াম উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সভাপতি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।
একসময় সারা বছরই আউটার স্টেডিয়াম দখলে থাকতো মেলাসহ বিভিন্ন কোনো ইভেন্ট আয়োজনের জন্য। সেই মাঠের সংস্কার কার্যক্রমে খুশি ক্রীড়াপ্রেমীরা।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের মানুষ এই মাঠকে খেলার উপযুক্ত করতে আন্দোলন করেছেন। যার ফলশ্রুতিতে সংস্কার হচ্ছে মাঠটি।
ক্রীড়া সংগঠকরা বলছেন, চট্টগ্রামে একে একে অনেকগুলো খেলার মাঠ হারিয়ে গেছে। সেখানে গড়ে উঠেছে স্থাপনা। আউটার স্টেডিয়াম থেকে গড়ে ওঠেছে দেশসেরা অনেক ক্রীড়াবিদ। খেলতে না পারলে খেলোয়াড় তৈরি হবে কীভাবে?
জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, সাবেক জাতীয় ফুটবলার আশীষ ভদ্র এ মাঠে খেলেছেন। জাতীয় ক্রিকেট দলের মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, ইকবাল খান, আকরাম খান, নুরুল আবেদীন নোবেল, ফজলে রাব্বী রুবেল, নাফিস ইকবাল, আফতাব আহমেদ, নাজিম উদ্দিন, তামিম ইকবালের মতো ক্রিকেটাররা এই মাঠে খেলে তাদের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেন। খবর বাংলানিউজ।
‘স্টার যুব টুর্নামেন্ট এবং স্টার সামার টুর্নামেন্টও এ মাঠে আয়োজন করা হতো। মাঠের চারদিকে প্রচুর দর্শক খেলা উপভোগ করতেন। কলকাতা ইস্ট বেঙ্গল টিমও খেলে গিয়েছিল এ মাঠে। চট্টগ্রামের ক্রীড়াপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু আউটার স্টেডিয়াম নতুন রূপে ফিরছে-এটা সুসংবাদ’।