রাজিব শর্মা
বাজারে সবজি থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, চাল, ডাল ভোজ্যতেলসহ প্রায় সকল কিছুর দাম বাড়তি ।
পাইকার ও আড়তদারদের মতে, বাজারে সরবরাহ সংকট, আমদানিতে বাড়তি খরচ ও চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনে সংকটের কারণে দাম কমছে না।
রেয়াজউদ্দিন বাজারে আসা ক্রেতা শি- ক্ষিকা নাসরিন সুলতানা বলেন, বর্তমানে ৭০ থেকে ১০০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই । মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, চাল সবকিছুরই দাম বাড়তি ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নগরের অন্যতম কাঁচাবাজার রেয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রতিকেজি ভারতীয় টমেটো ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ টাকা, চায়না গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকা, লম্বা বেগুন ১২০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১২০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, দেশি শসা ১০০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৫৫ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চাল কুমড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতিহালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, প্রতি ডজন লেবু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে। হিসেবে গত সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু কিছু সবজির দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। এছাড়া অপরিবর্তিত থেকে লাল আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা, সাদা আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা, বগুড়ার আলু ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
সবজি বিক্রেতা মো. জসিম বলেন, সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে আড়তদারেরা। তারা বাজার তদারকিতে আসা প্রশাসনের লোকজনকে কম দর বললেও আমাদের কাছে কম দরে বিক্রি করে না। এছাড়া এখন আলু ছাড়া অন্য কোন সবজির দাম কমেনি। শীতকাল আসলে দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
বেড়েছে পেঁয়াজের দাম, অপরিবর্তিত আদা-রসুন
সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে মসলার দাম। গতকাল বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। এসব পেঁয়াজ গত দুই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল ৬০ টাকায়। আর অপরিবর্তিত রয়েছে আদা-রসুনের দাম। বাজারে চীন থেকে আমদানি করা রসুন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, দেশি রসুন ৮০ টাকা ও ভারতের কেরালার আদা ৮০ টাকা, চীনের আদা ১১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ী মো. ফোরকান বলেন, আমদানি সংকট ও নতুন পেঁয়াজ বের না হওয়ায় দাম একটু বাড়তি ।
কমছে না মাছের দাম
বাজারে পর্যাপ্ত মাছের সরবরাহ থাকার পরও দাম কমার কোন সুখবর নেই। গতকাল বাজারে ইলিশ মাছ আকার ও ওজন অনুযায়ী ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, রুই ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, কাতল ৩৫০ থেকে ৫৮০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৬০০ টাকা, কৈ ২৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, বেলে মাছ ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
রেয়াজউদ্দিন বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রবিন দাস বলেন, ‘নানা খরচ সমন্বয় করে বাড়তি দরে মাছ বিক্রি করতে হচ্ছে।’
মাংস ও মুরগির দাম অপরিবর্তিত, কিছুটা কমেছে ডিম
গরুর মাংসের দরে কোন পরিবর্তন আসেনি। সরকারের তরফ থেকে মাংসের দরে নির্ধারণ করে দিলেও ওই দরে কোন বাজারে বিক্রি হতে দেখা যায়নি । মাংস ব্যবসায়ীরা তাদের মনগড়া দর থেকে সরে আসে নি। গতকাল বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৮০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি, ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা, কক মুরগি ২৯৫ থেকে ৩১০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৬০ টাক আর ফ্রোজেন ব্রয়লার ২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ডজনপ্রতি ৫ টাকা কমেছে ডিমের দাম । গতকাল ডিম বিক্রি হয়েছে ফার্মের লাল ১৩৫ টাকা, সাদা ১২৫ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ১৭০ টাকা ও হাঁসের ডিম ২২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে । মাংস ব্যবসায়ী মো. আলী বলেন, খামার পর্যায়ে দাম বাড়ার কারণে মাংসের দামে পরিবর্তন আসছে না। খামারিদের তদারকি করতে হবে। ওঠানামা করছে মুদিপণ্যের দাম
গতকাল প্যাকেট পোলাওয়ের চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওয়ের চাল মানভেদে ৯০ থেকে ১৩০ টাকা, ছোট মসুরের ডাল ১৫৫ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল (নেপালী) ১৭০ টাকা, খেশারি ডাল ১২০ টাকা, বুটের ডাল ১২০ টাকা, ডাবলি ৬৫ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা এবং মাশকলাইয়ের ডাল ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৭২ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা, খোলা ঘি ১ হাজার ২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১১০ টাকা, খোলা চিনি ১০৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৩০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতিলিটার ২২০ টাকায় বিক্রি হয় । এছাড়া এলাচি ৪ হাজার ৮০০ টাকা, দারুচিনি ৫০০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ২৮০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ১ হাজার ৩৫০ টাকা ও কালো গোল মরিচ ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে।