‘সবচেয়ে ভালো লাগছে বাংলাভাষার গানে চট্টগ্রামের ভাষা জুড়ে দিয়েছি’

মুখোমুখি কবি-সাংবাদিক ওমর কায়সার

নিজাম সিদ্দিকী »

২৮ অক্টোবর, শনিবার। চট্টগ্রামে টানেল উদ্বোধনের ঐতিহাসিক মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমি আজ আপনাদের কাছে এসেছি একটা উপহার নিয়ে। দইজ্জার তল দিয়ে গাড়ি চলে। সেটা হলো- এই টানেল। এই টানেল নির্মাণ প্রকল্পে যারা যারা সম্পৃক্ত ছিলেন, সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

বঙ্গবন্ধু টানেলের থিম সং-এর উদ্ধৃতি দিয়েই প্রধানমন্ত্রী ‘দইজ্জার তল দিয়ে গাড়ি চলা’র বিষয়টি তুলে ধরেন তাঁর বক্তব্যে।

গানটি ইতিমধ্যেই আড্ডা-আলোচনায় অনেকের মুখে মুখে ফিরছে। জনপ্রিয়তার আসন ছুঁয়েছে। ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর এ অনবদ্য গানের রচচিয়তা কবি-সাংবাদিক ওমর কায়সার।

সুপ্রভাত বাংলাদেশ কার্যালয়ে শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে কথা হয় এ গান লেখার আদ্যপান্ত নিয়ে। প্রথমেই জানতে চেয়েছি আনুষ্ঠানিকভাবে গানটি প্রচারের পর তাঁর অনুভূতির কথা।

জবাবে ওমর কায়সার বলেন, ‘আমার খুব ভালো লেগেছে। কারণ এটা বাংলাদেশের উন্নয়নের একটা মাইলফলক। বিশেষ করে বিরাট স্থাপনা আমাদের চট্টগ্রামে হয়েছে। সবচেয়ে খুশি লেগেছে আমার এই বড় একটা ইভেন্টে থিম সংটা আমাকে দিয়ে লিখিয়েছে সরকার।

এই ঘটনার শুরুর গল্পটা জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘আমাকে একদিন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন থেকে ফোন করে বলা হয়, টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে আমরা একটা থিম সং চাইছি। আপনি লিখবেন। আমি তখন বলেছি-দেখি, চেষ্টা করবো। যেদিন আমাকে অনুরোধ করেছেন সেদিন রাতের মধ্যেই (সম্ভবত অক্টোবর মাসের ১০ তারিখের পর হবে) গানটা তৈরি করে দেওয়ার কথা বলা হয়।

সেদিন এমনিতেই আমার কিছু ব্যস্ততা ছিল। এর মধ্যেই আমি সময় করে লিখে ফেলেছি। এরপরই আমাকে ফোন করলেন এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী, সোলসের পার্থ বড়–য়া। তিনি জানালেন, জেলা প্রশাসন থেকে তাঁকে গানের ব্যাপারে একটা গাইড লাইন দেওয়া হয়েছে, গানটা কি রকম হতে পারে। এরপর ফোন করলেন এদেশের আরেক জনপ্রিয় শিল্পী সন্দীপন। ওঁরা আসলে একজন গীতিকার খুঁজছিলেন। সন্দীপন আমাকে চেনে। ওঁ-ই আমার নামটা ওখানে দিয়েছে।

তো যাই হোক; আমি এক রাতের মধ্যে গানটা লিখে পার্থকে (পার্থ বড়–য়া) পাঠিয়ে দিলাম। এরপর জেলা প্রশাসক আবার গানের ব্যাপারে কিছু সাজেশন দিলেন। পার্থ আবার কিছু পরামর্শ দিলেন। এভাবে নানাভাবে সংযোজন-বিয়োজনের মধ্য দিয়ে রাত তিনটা বাজে গানটি একটি পূর্ণাঙ্গ সাঙ্গীতিক রূপ পেলো। সম্পূর্ণ আয়োজনটা আসলে পার্থই করেছেন। সুর দেওয়া, এর সঙ্গে মিউজিক কম্পোজ করা সবকিছু উনিই করেছেন। শেষ পর্যন্ত এ গানের একটা কাঠামো দাঁড়ালো।’

এই গান রচনার ক্ষেত্রে আপনার কাছে অনুরোধটা প্রাধান্য পেয়েছে ; না আপনার ভেতরকার অনুভূতির প্রতিফলন ঘটেছে?

এমন প্রশ্নের জবাবে ওমর কায়সার জানান, ‘অনুরোধে তো আসলে কিছু লেখা হয় না। আমার ভেতর থেকে একটা তাগিদ অনুভব করেছি। দেশে বিশেষ করে চট্টগ্রামে জাতীয় পর্যায়ে একটা বড় ধরনের কাজ হচ্ছে এ অবস্থায় গান না হলেও একটা ছড়া তো আমি লিখতাম; না হয় একটা কবিতা লিখতাম। এখন সেখানে একটা গানই হয়ে গেলো।’

গান লেখার বিষয়টা কি এই প্রথম?
‘না, গান লিখিনি। কিন্তু এর আগে আমার কবিতা নিয়ে গান হয়েছে। যেমন ; শাহবাগের আন্দোলন নিয়ে কবিতা লিখেছিলাম সেটা গান হয়েছে। এছাড়াও আমার কবিতা নিয়ে অনেকেই গান করেছেন।’

এধরনের বিষয় আপনাকে কতটা আলোড়িত করেছে?
‘এখানে আমার সবচেয়ে ভালো লাগছে বাংলাভাষায় লেখা গানের মধ্যে চট্টগ্রামের ভাষা জুড়ে দিয়েছি। সেই জুড়ে দেওয়া চট্টগ্রামের কথাগুলোই মানুষ পছন্দ করেছে।’

টানেলের থিম সং-এর সুর সংযোজন ও সঙ্গীত পরিচালনা পার্থ বড়–য়া। আর এতে কন্ঠ দিয়েছেন পার্থ বড়–য়া, নিশীথা বড়ুয়া,অরিন ও সন্দীপন।

টানেলের থিম সং
আলোয় আলোয় আজ পাতালপুরি
জাদুর ছোঁয়ায় হয়ে গেল স্বপ্নপুরী
জাতির পিতা তোমার নামে
টানেল হলো চট্টগ্রামে
আনন্দে আজ মন হয়েছে রঙিন ঘুড়ি।।

কী উনিলাম আজব কথা
দইজ্জার তলে চলের গাড়ি
বুডুর গড়ি দুই মিনিটে
পৌছি যাইয়ুম বাপর বাড়ি

শেখ হাসিনা বাপর বেডি
কাজর খেইল দেহাই দিইয়ি
হথাত যারাফডর ফডর
ইতারা বেয়াগ ফডত গেইয়ি।

আমরা গড়ি, আমরা পারি
দুঃখনদী দিলাম পাড়ি
বিশ্বে এমন অগ্রগতির নেইকো জুড়ি।।

অবাক বিশ্ব তাকিয়ে আছে
অবাক বিশ্ব তাকিয়ে আছে
অবাক বিশ্ব তাকিয়ে আছে।।