সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার লিখলেন যুক্তরাষ্ট্রের রূপকথা

সুপ্রখাত ক্রীড়া ডেস্ক »

ক্রিকেটে যুক্তরাষ্ট্রের আগমন ঠিক জাতিগতভাবে নয়। মার্কিন মুলুকে ক্রিকেট খেলার নাম ঠিক কতজন জানে তার একটা জরিপ করলেও বিস্মিত হতে হবে। বাইশগজের মহারণে মার্কিনিদের প্রতিনিধিত্ব করছে কয়েকটি দেশ! জীবিকার সুবাদে যুক্তরাষ্ট্রে আগমন অতঃপর ব্যাট-বলের খেলায় মজে যাওয়া, সেখান থেকে জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব, এই হলো আমেরিকার ক্রিকেটের জাগরণের গল্প। ক্রিকেটে জাগরণের গল্পে যদি প্রথম কোনো দেশ ইতিহাস লিখে থাকে, সেই তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রকে রাখতেই হবে। বিশ্বকাপের মতো মহামঞ্চে পাকিস্তানকে হারিয়ে যে ইতিহাস সৃষ্টি করলো তারা, বেসবলের মাঠেও কোনো এক গ্যালারিতে যুগ যুগ বেঁচে থাকবে সেই রূপকথা। মার্কিন মুলুকের আনাচেকানাচে এই রুপকথার গল্প ছড়িয়ে দেওয়া মানুষটির নাম সৌরভ নেত্রভালকর, একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। সুপার ওভারে পাকিস্তানের সামনে ১৯ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়ে মাঠ ছাড়ছেন অ্যারন জোন্স ও হারমিত সিং, ক্যামেরার লেন্স ঘুরে গেল অন্যদিকে। মাঠের একপাশে গা গরম করছেন সৌরভ, খুব সাধারণ ব্যাপারস্যাপার। ছয় বল পর এই যুবকই যে উত্তাল করে দিবেন ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরির গ্যালারি, সেটা কি কেউ ভেবেছিল? নেত্রভালকর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন মূলত জীবিকার তাগিদে। তার আগে খেলেছেন পেশাদার ক্রিকেট। ভারতের হয়ে যুব বিশ্বকাপেও খেলেছেন তিনি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত খেলা এই মারাঠি পেসার বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত কোম্পানি ওর‌্যাকলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন। তার লিঙ্কডইন প্রোফাইল অনুযায়ী, সৌরভ ওর‌্যাকলের টেকনিকাল স্টাফের প্রিন্সিপাল সদস্য। সৌরভের জন্ম মুম্বাইয়ে, ১৯৯১ সালে। ২০১০ সালে ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে জার্সি গায়ে চড়িয়েছিলেন। সেই দলে সৌরভের সঙ্গে খেলা লোকেশ রাহুল, মায়াঙ্ক আগরওয়াল, জয়দেব উনাদকাটরা পরে ভারত জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলেন। সৌরভ উম্বাইয়ের হয়ে রঞ্জিতেও মাঠ মাতিয়েছিলেন। ভারতের ক্রিকেটে পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছিলেন না সৌরভ। এর মধ্যেই মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি পাওয়ার পর মাস্টার্স করতে মার্কিন মুলুকে চলে যান এই ফাস্ট বোলার। সেখানে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করেন মাস্টার্স। এরপর চাকরি নিয়ে থেকে যান সে দেশেই। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট দলে সুযোগ পেয়েছিলেন সৌরভ। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত তিনি আমেরিকার হয়ে ২৯টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ২৯টি উইকেট। সব মিলিয়ে মার্কিনিদের হয়ে ৪৮টি ম্যাচ খেলে এই ইঞ্জিনিয়ার নিয়েছেন ৭৩টি উইকেট। মজার ব্যাপার হলো, সৌরভ বিশ্বকাপ খেলছেন চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে। ১৭ জুন পর্যন্ত সৌরভকে ছুটি দিয়েছে ওর‌্যাকল। গ্রুপ পর্যায়ের শেষ পর্যন্ত বলবৎ থাকছে তার ছুটি। কিন্তু যে ইতিহাস গড়েছে তার দল। প্রথম ম্যাচে কানাডার বিরুদ্ধে জয়ের পর পাকিস্তানকে হারিয়ে উজ্জ্বল সম্ভাবনা জাগিয়েছে সুপার এইটের। আর যদি সেটা হয়, তবে ছুটিটা বাড়াতে হবে সৌরভকে। ওর‌্যাকল কি সেটা দিবে? এই তো সময় আমেরিকার ইতিহাস গড়ার। রূপকথার গল্প রচিত করার। আরেকবার যদি সেটার নায়ক হয়ে যান সৌরভ, ওর‌্যাকলের ইতিহাসও নিশ্চয়ই লেখা হয়ে যাবে অমরত্বের কালিতে। ওর‌্যাকল নিজেরাও বোধহয় সেটাই চাইছে। তাই তো সৌরভকে অভিনন্দন জানিয়ে তারা লিখেছে, ‘ঐতিহাসিক ফলাফলের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শুভেচ্ছা। দলের জন্য গর্বিত। পাশাপাশি আমাদের ইঞ্জিনিয়র এবং ক্রিকেট তারকা সৌরভের জন্যও গর্বিত।’
গোটা মার্কিন মুলুক চাইছে, ছুটি বাড়ুক বাইশগজে সুরভিত সুবাস ছড়ানো সৌরভের। আর সৌরভের ছুটিতে বাজুক প্রতিপক্ষের ছুটির ঘণ্টা। অমরত্বের কালিতে লেখা হোক বেসবলের নগরীতে ক্রিকেটের মহাকাব্য। খবর রাইজিংবিডি.কম’র