নুরুল আমিন নামে এক পাইকার সাংবাদিককে বলেন, ৩৫ বছর ধরে জেলেদের থেকে পাইকারি ইলিশ কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেছি। কিন্তু দীর্ঘ এ ব্যবসায়ী জীবনে এত কম ইলিশ দেখিনি। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
এ পরিস্থিতি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ চ্যানেলের। বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গার মতো এ বছর এখানেও ভরা মৌসুমে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।
বিপ্লব জলদাস নামে এক জেলে নিজের হতাশার কথা উল্লেখ করে সাংবাদিককে বলেন, বঙ্গোপসাগরের মোহনায় একবার যাওয়া–আসায় তাঁর জ্বালানি তেল খরচ হয় পাঁচ লিটার। দিনে চারবার জালের কাছে যেতে হয়। তাঁর সঙ্গে চারজন শ্রমিক থাকেন। প্রতি শ্রমিকের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলে দিতে হয় ১ হাজার ৩০০ টাকা। সব মিলিয়ে তাঁর দিনের খরচ ছয় হাজার টাকা। কিন্তু ইলিশ বিক্রি করে কখনো দুই হাজার, কখনো তিন হাজার পান। যে সাড়ে চার কেজি ইলিশ তিনি পেয়েছেন, তা আড়াই হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।
সীতাকুণ্ড উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সন্দ্বীপ চ্যানেলে ইলিশ ধরা পড়েছিল ২ হাজার ৫৪ মেট্রিক টন। পরের বছর তা কমে ৭৪৭ মেট্রিক টনে নেমে আসে। এরপর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরও কমে ৪৩৮ মেট্রিক টনে নেমেছে। চলতি বছর এসে নেমেছে মাত্র ২০০ মেট্রিক টনে। অর্থাৎ ৩ বছরে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা কমেছে ১ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন।
ইলিশ কমে যাওয়ার পেছনে ছয়টি কারণকে দায়ী করছে উপজেলা মৎস্য বিভাগ। এগুলো হলো জলবায়ু পরিবর্তন, কলকারখানার দূষণ, অতি আহরণ, নাব্যতাসংকট, জাহাজ ভাঙা কারখানার দূষিত কেমিক্যাল ও বালু উত্তোলনে ড্রেজিংয়ের শব্দ।
মাত্র কয়েকদিন পরেই অর্থাৎ আগামী ৫ থেকে ১০ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। স্থানীয় জেলে সর্দার বাদল জলদাস আক্ষেপ করে বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন কেউ এখন আর ইলিশ ধরে না। তবুও অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের আরও ভাবা উচিত। না হলে সাগরে মাছ ধরার মতো জেলে আর থাকবে না।
বঙ্গোপসাগর দ্রুত মাছশূন্য হতে চলেছে। বছরে দীর্ঘ একটি সময় সাগরে মাছধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়ে তৎপর হওয়া। শুধু বিশেষজ্ঞদের মতামত নয় জেলেদের পরামর্শ বা মতামতও শোনা দরকার। তারা যেহেতু প্রত্যক্ষভাবেই জড়িত সেহেতু তাদের অভিজ্ঞতার দাম দিতে হবে।