সন্তানকে বুকে জড়িয়ে পুড়ে অঙ্গার পপি, মর্গেও একসঙ্গে

সুপ্রভাত ডেস্ক

চলন্ত ট্রেনে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন, ভিড়ে ঠাসা কামরায় দিগি¦দিক ছোটেন যাত্রীরা, হুড়োহুড়ির ভেতর দিয়ে ছোট ভাই ও এক ছেলে নিরপদে সরে গেলেও, পারেননি নাদিরা আক্তার পপি।
তিন বছরের ছেলেকে বুকে জড়িয়েই পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন ৩৫ বছর বয়সী এই নারী। খবর বিডিনিউজের
অগ্নিকূপে পড়ে যেভাবে সন্তানকে বুকে আগলে রেখেছিলেন, ঢাকা মেডিক্যালের মর্গের বাইরে লাশবাহী সাদা ব্যাগেও একইভাবে রাখা ছিল তাদের লাশ।

পপি ছিলেন মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী, ছোট ভাই ও দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় আসছিলেন তিনি। মঙ্গলবার ভোরে বিএনপির হরতাল শুরুর আগে আগে ট্রেনটি যখন ঢাকায় ঢুকছিল, তখনই ট্রেনের ভেতরে থাকা যাত্রীবেশী নাশকতাকারীরা আগুন দেয় বলে পুলিশের ভাষ্য।
ভয়াবহ ওই ঘটনায় পুড়ে ছাই হয়েছে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের তিনটি বগি। পপি ও তার ছেলে ইয়াসিন ছাড়াও এ ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অজ্ঞাত পরিচয় দুই পুরুষ। তাদের লাশও এখন মর্গের বাইরে রাখা হয়েছে, শরীর এতটাই পুড়ে গেছে যে পরিচয় জানতে এখন ডিএনএ পরীক্ষা লাগবে।
পপির স্বামী মিজানুর রহমান কাওরানবাজারে ব্যবসা করেন। স্ত্রী-সন্তানের মৃত্যুর খবরে ছুটে যান হাসপাতালে।

মিজানুরের ভাই দেলোয়ার হোসেন টিটু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, পপি তার দুই সন্তান ও ছোট ভাইকে নিয়ে ঢাকায় আসার জন্য ট্রেনে উঠেছিলেন। ভাইটিও বয়সে কিশোর। ট্রেনে আগুন লাগার পর বড় ছেলে তার মামার সঙ্গে বের হয়ে আসতে পারলেও পপি ও তার ছোট ছেলে বের হতে পারেনি।
আমরা তার লাশ পেয়েছি মায়ের কোলে, মাকে জড়িয়ে ধরে রাখা অবস্থায়।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান ঢাকা মেডিক্যালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই সন্তানটি ভয় পেয়ে হয়ত তার মাকে জড়িয়ে ধরেছিল, তার মাও হয়ত সন্তানকে জড়িয়ে ধরে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুজনকেই মৃত্যু আলিঙ্গন করতে হয়েছে। ওই অবস্থাতেই পাওয়া গেছে তাদের লাশ।’
যাত্রীদের বরাত দিয়ে তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, ট্রেনটি খিলক্ষেতে এলে যাত্রীরা বগিতে আগুন দেখতে পান। তারা চিৎকার শুরু করলে চালক ট্রেনটি তেজগাঁও স্টেশনে থামান। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে।
রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা অঞ্চলের সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, তারা এ ঘটনাকে ‘রাজনৈতিক নাশকতা’ হিসেবেই সন্দেহ করছেন।
তিনি জানান, ট্রেনের দুই বগির সংযোগস্থলে প্রথমে আগুন দেখতে পান রেলওয়ে স্টাফরা। তারা ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশাপাশি দুটি কোচে।
এ সময় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিলে অনেকে হুড়োহুড়ি করে নামার চেষ্টা করেন। আবার ভোরের ঘুম ঘুম পরিবেশে অনেকে শুরুতে বুঝতেই পারেননি কী ঘটতে যাচ্ছে।
ওই ঘটনায় ট্রেন থেকে নামতে গিয়েও কয়েকজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে মাথায় আঘাত পাওয়া একজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত ওই ব্যক্তির নাম নুরুল হক ওরফে আব্দুল কাদের (৫৩)। নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় তার বাড়ি। ঢাকায় তিনি হামীম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিবহন শাখায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।