সড়ক কি নিরাপদ হবে না কখনো

যাত্রী কল্যাণ সমিতির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, গত জুন মাসে সারা দেশে ৫৫৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮০১ জন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত তিন হাজার ২৬৭ জন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) তথ্যের ভিত্তিতে এই পরিসংখ্যান প্রস্তুত করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। জানা যায়, জুন মাসে রেলপথে ৪৬টি দুর্ঘটনায় ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন নয়জন। এ সময় নৌ পথে নয়টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ১২ জনের মৃত্যু হয়, সাতজন আহত হন ও নয়জন নিখোঁজ রয়েছেন। মাসজুড়ে সড়ক, রেল ও নৌ পথে মোট ৬১২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ঝরেছে ৮৫৫ প্রাণ। আহত হয়েছেন তিন হাজার ২৮৩ জন।
সবচেয়ে বেশি হয়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। জুনে ২১৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২২২ জন নিহত ও এক হাজার ৯৩ জন আহত হয়েছেন, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। শতকরা হিসাবে নিহত হয়েছেন ৩৮ দশমিক এক শতাংশ ও আহতের ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৭ হাজার ৮৩৭টি যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলে, যা মোট দুর্ঘটনার ২২ দশমিক ২৯ শতাংশ। তারপর রয়েছে ট্রাক/কাভার্ড ভ্যান ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ, বাস/মিনিবাস ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ, অটোরিকশা ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ব্যাটারিচালিত রিকশা ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। অন্যান্য যানবাহন বাকি দুর্ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মারা যাওয়াদের প্রায় ৪০% শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনা বেশি হওয়ার পেছনে পরিবহন ব্যবস্থায় অব্যবস্থাপনা যেমন দায়ী, শিক্ষার্থীদের অসচেতনতাও তেমনি দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেসব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই মোটর সাইকেলে তিন জন ওঠা, হেলমেট ব্যবহার না করা, অতিরিক্ত গতিতে চালানোর প্রবণতা, ট্রাফিক আইন না মানার কারণে দুর্ঘটনা হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, মোটর সাইকেল চড়া এবং চালানো বাদেও রাস্তায় চলাচল, গণপরিবহন ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ বলে বলছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। তবে শিক্ষার্থী ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ট্রাফিক আইন নিয়ে অসচেতনতা বা আইন না মানার প্রবণতা থাকার পেছনে শিক্ষার্থীদের চেয়ে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিবহন ব্যবস্থাপনার দায় বেশি বলে মনে করেন তারা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ভিত্তিতে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাম্পেইন করা দরকার। ক্যাম্পেইন, পোস্টার-ব্যানার প্রদর্শনী আয়োজন করতে হবে। নিয়মিত এই ধরনের কার্যক্রম চলমান থাকলে শিক্ষার্থীরা এই বিষয়গুলোর নিয়মিত অনুশীলন করবে। তাদের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতাও ধীরে ধীরে তৈরি হবে।