সুপ্রভাত ডেস্ক »
বিপরীতমুখী রাজনৈতিক অবস্থানের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলছেন, এই সময়ে এসেও সংলাপের মাধ্যমে সমাধান ‘অসাধ্য’ ভাবছেন না তিনি। গতকাল বুধবার তফসিল ঘোষণার জন্য জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে রাজনৈতিকগুলোকে সংলাপে বসে সমাধান খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে সকল দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সর্বদা স্বাগত জানাবে। পারস্পরিক প্রতিহিংসা, অবিশ্বাস ও অনাস্থা পরিহার করে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়।’
এমন এক সময় সিইসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেন, যখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন দুই শিবিরে বিভক্ত। সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সারা দেশে অবরোধের কর্মসূচি পালন করছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার অবস্থানে অনড়।
সামনে কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। দশ বছর আগের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্মৃতি ফিরে ফিরে আসছে।
২০১৪ সালে সেই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। নির্বাচনে জিতে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।
এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ভোটের ফলে তাদের ভরাডুবি হয়। সে সময় ‘আগের রাতে’ ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করে দলটি। সংসদের মেয়াদের শেষ দিকে এসে তাদের নির্বাচিত এমপিরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।
এবার ২০১৪ সালের মত একই দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ প- হওয়ার পর থেকে রাজনীতিতে ফিরে এসেছে সহিংসতা। তাতে ডজনখানেক মানুষের প্রাণ গেছে। যানবাহনে অগ্নিংযোগ আর নাশকতার ঘটনায় জনমনে বাড়ছে শঙ্কা।
যুক্তরাষ্ট্র দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে নিঃশর্ত সংলাপের আহ্বান জানালেও বিবাদমান পক্ষগুলো তাতে সাড়া দেয়নি। বিএনপি এই সংলাপে কোনো ফায়দা দেখছে না। আর আওয়ামী লীগ বলেছে, এখন আর সংলাপের ‘সময় নেই’।
দেশের এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিরোধের মীমাংসা না করে তফসিল ঘোষণা না করার আহ্বান জানিয়েছিল কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তবে নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করে বলেছে, নির্বাচনের না আসার এখতিয়ার রাজনৈতিক দলের থাকলেও ইসির সামনে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের বিকল্প নেই।
নির্বাচন কীভাবে হবে, সেই প্রশ্নে রাজনৈতিক মতভেদ থাকার কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য কাক্সিক্ষত অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন প্রশ্নে, বিশেষ করে নির্বাচনের প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতির প্রশ্নে দীর্ঘ সময় ধরে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বে মতভেদ পরিলক্ষিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বহুদলীয় রাজনীতিতে মতাদর্শগত বিভাজন থাকতেই পারে। কিন্তু মতভেদ থেকে সংঘাত ও সহিংতা হলে তা থেকে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
‘মতৈক্য ও সমাধান প্রয়োজন। আমি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সকল রাজনৈতিক দলকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব, সংঘাত ও সহিংতা পরিহার করে সদয় হয়ে সমাধান অন্বেষণ করতে।’
নিজেরা চেষ্টা করেও বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে আলোচনার টেবিলে আনতে না পারার ব্যর্থতার কথাও ভাষণে স্মরণ করেন সিইসি।
তিনি বলেন, আগ্রহী সকল রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী সমাজ, শিক্ষাবিদ, নাগরিক সমাজ, সিনিয়র সাংবাদিক এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন অংশীজনদের সাথে একাধিকবার সংলাপ ও মতবিনিময় করেছি। তাদের মতামত শুনেছি। সুপারিশ জেনেছি। আমাদের অবস্থানও ব্যাখ্যা করেছি।
নিবন্ধিত অনাগ্রহী সকল রাজনৈতিক দলকেও একাধিকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোকে তিনি মনে করিয়ে দেন, পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক আস্থা, সহনশীলতা ও সহমর্মিতা টেকসই ও স্থিতিশীল গণতন্ত্রের জন্য আবশ্যকীয় নিয়ামক।
জনগণকে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, জনগণকে অনুরোধ করব, সকল উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি পরাভূত করে নির্ভয়ে আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট কেন্দ্রে এসে অবাধে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে।
তিনি বলেন, ভোট আপনার। ভোট প্রদানে কারো হস্তক্ষেপ বা প্ররোচনায় প্রভাবিত হবেন না। কোনো রকম হস্তক্ষেপ বা বাধার সম্মুখীন হলে একক বা সামষ্টিকভাবে তা প্রতিহত করবেন।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল ও ফলপ্রসূ করতে সবার সহযোগিতা চেয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদের বিশ্বাস, স্ব স্ব অবস্থান থেকে সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্বশীল আচরণ ও আবশ্যক ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে আসন্ন দাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ হবে । দেশে ও বহির্বিশ্বে প্রশংসিত ও বিশ্বাসযোগ্য হবে। দেশের জনশাসনে জনগণের জনপ্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। গণতন্ত্র সুসংহত হবে।