দেশের জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ বধিরতায় ভুগে। সংক্রামক ও অসংক্রামক নানা রোগ নিয়ে সচেতনতা এবং চিকিৎসা সুবিধা বাড়লেও বধিরতার সমস্যা ও এর জটিলতা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা কম, চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। বিশ্ব শ্রবণ দিবস উপলক্ষে সোসাইটি অব অটোলজির আলোচনা সভায় তুলে ধরা তথ্যে বলা হয় শব্দদূষণের কারণে সাড়ে ১০ শতাংশ, মধ্যকর্ণের প্রদাহের (সিএসওএম) কারণে সাড়ে ৬ শতাংশ এবং মধ্য কর্ণে (ওএমই) পানি জমার কারণে ৬ শতাংশ মানুষ কানে কম শোনে, বয়সের কারণে কানে কম শোনা মানুষের হার সাড়ে ৩৫ শতাংশ। একটি জাতীয় পত্রিকার প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সভায় উত্থাপিত মূল প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত শ্রবণ সমস্যাকে জনস্বাস্থ্যজনিত সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এ সমস্যা সমাধানে জনসচেতনতা বেশি প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শ্রবণ শক্তি কমে গেলে প্রবীণদের সমস্যা বেশি হয়। তাদের মধ্যে হতাশা বাড়ে, স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়ার রোগে তাদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাঁরা সরকারি মেডিকেল কলেজে অডিওলজি বিভাগের উন্নয়ন, গবেষণা বাড়ানো, হিয়ারিং এইড (কৃত্রিম শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র) সহজলভ্য করা, শব্দদূষণ কমানো এবং সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দেন। কানের ময়লা নিজে পরিষ্কার করা সঠিক নয় উল্লেখ করে ময়লা শক্ত হলে চিকিৎসকদের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন তাঁরা।
আমাদের দেশে বধিরতার চিকিৎসা অপ্রতুল, নাক-কান গলা চিকিৎসক মাত্র ৬০৪ জন, শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষক রয়েছে মাত্র ১৬০ জন। বিশ্বে শ্রবণ সমস্যায় আক্রান্ত মানুষদের সংখ্যা ১৬০ কোটি, ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা আড়াই কোটি হতে পারে।
শ্রবণ সমস্যা অর্থাৎ কানে কম শোনার বিষয়টি নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো যেমন প্রয়োজন তেমনি এর চিকিৎসা সুবিধাও বাড়ানো প্রয়োজন। শ্রবণ শক্তি হ্রাস পাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ শব্দদূষণ বিশেষ করে শহর এলাকায় এর দূষণ ভয়াবহ, এর ফলে শিশু এবং প্রবীণরা বেশি আক্রান্ত হয়। যানবাহনের হর্নের শব্দ, অনবরত মাইকের আওয়াজ শব্দদূষণ ঘটায়। সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাইকে উচ্চমাত্রার শব্দ নিয়ন্ত্রণে আইনের প্রয়োগ খুবই দুর্বল। শ্রবণ সমস্যার জন্য আমাদের অসচেতনতাও কম দায়ী নয়। আমরা কানের ময়লা পরিষ্কার করতে যে সকল মাধ্যম ব্যবহার করি তা খুবই ক্ষতিকারক। কানে পানি ঢুকেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন প্রয়োজন, সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই উত্তম। হিয়ারিং এইড (কৃত্রিম শ্রবণ সহায়ক) সুলভে যাতে সমস্যা আক্রান্তরা পেতে পারেন সে ব্যাপারে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ও পুনর্বাসনের ব্যাপারেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আমরা মনে করি জাতীয়ভাবে শ্রবণ সমস্যার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রতিকারের পদক্ষেপ নিতে হবে। অবহেলা ও অসচেতনতা এবং যথাসময়ে চিকিৎসা না পেলে শ্রবণ সমস্যা সমাজের এক বড়ো কর্মক্ষম গোষ্ঠীর জন্য নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আসতে পারে।
মতামত সম্পাদকীয়