সুপ্রভাত ডেস্ক »
জিয়া আকবরের অফ স্টাম্পের বাইরের বল কাট করে বাউন্ডারিতে পাঠালেন তাওহিদ হৃদয়। বাংলাদেশ পৌঁছে গেল জয়ের বন্দরে। গর্জে উঠলেন পশ্চিম গ্যালারির দর্শকরা। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডেও উড়তে শুরু করল পতাকা। তবে মাঠের দুই ব্যাটসম্যান উদযাপন সারলেন স্রেফ নিজেদের আলিঙ্গন করে। অবশ্য আগেই সিরিজ হেরে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর পর এর বেশি কিছু করার কারণও নেই! খবর বিডিনিউজের।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয় ৭ উইকেটে। আফগানিস্তানকে ১২৬ রানে আটকে রেখে ২৩.৩ ওভারেই লক্ষ্যে পৌঁছায় স্বাগতিকরা।
এ নিয়ে হেরে যাওয়া সবশেষ তিন সিরিজেই শেষ ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। এর আগে গত বছর জিম্বাবুয়ে ও চলতি বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর শেষটি জেতে তারা। শেষটা ভালো না হলেও প্রথম দুই ম্যাচ জয়ের সৌজন্যে সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে নিজেদের করে নিয়েছে আফগানিস্তান।
শেষ ম্যাচে স্বস্তির জয়ে বাংলাদেশের নায়ক শরিফুল ইসলাম। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে স্রেফ ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সফরকারীদের অল্পে বেঁধে রাখতে বড় ভূমিকা রাখেন বাঁহাতি পেসার। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার পর ছোট পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি রশিদ খানকে বিশ্রামে রেখে খেলতে নামা আফগানিস্তান। আগের দুই ম্যাচের ব্যর্থতা ঝেরে লিটন দাস খেলেন অপরাজিত ৫৩ রানের ইনিংস।
টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে একদমই সুবিধা করতে পারেনি আফগানিস্তান। পাওয়ার প্লেতে তাদের কঠিন পরীক্ষা নেন শরিফুল ও তাসকিন আহমেদ। স্রেফ ২১ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় সফরকারীরা।
তৃতীয় ওভারে ইব্রাহিম জাদরানকে ফেরান শরিফুল। অফ স্টাম্পে পিচ করে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে ব্যাট এগিয়ে দিয়ে কট বিহাইন্ড হন আফগান ওপেনার। চার বারের দেখায় প্রতিবারই তাকে আউট করলেন শরিফুল।
তিন বল পর শরিফুলের ব্যাক অব লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা ডেলিভারিতে শিকার রহমত শাহ।
আগের ম্যাচে ঝড় তোলা রহমানউল্লাহ গুরবাজকে এদিন বেশি দূর যেতে দেননি বিশ্রাম কাটিয়ে এক ম্যাচ পর ফেরা তাসকিন। ব্যাটের ওপরের কানায় লাগা বল অনেকটা লাফিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন মুশফিকুর রহিম। শেষ হয় গুরবাজের ২২ বলে ৬ রানের অস্বস্তিময় ইনিংসের। মোহাম্মদ নবিকেও বেশিক্ষণ টিকতে দেননি শরিফুল। ১ রান করে এলবিডব্লিউ হন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
দুই পেসার মিলে প্রথম ১০ ওভারে ৫২টি ডট বল করেন। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ডট বলের রেকর্ড এটি। গত বছর জিম্বাবুয়ে ও ১৯৯৯ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও সমান ৫২টি করে ডট বল খেলিয়েছিল তারা।
শরিফুল, তাসকিনের দুর্দান্ত শুরুর পর উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন স্পিনাররা। নাজিবউল্লাহ জাদরানকে এলবিডব্লিউ করে ৩২ রানে আফগানদের পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটান সাকিব আল হাসান।
একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে পঞ্চাশ পার করান হাশমতউল্লাহ শাহিদি। কিন্তু তাইজুল ইসলামের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন ৫৪ বলে ২২ রান করা আফগান অধিনায়ক।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে অভিষিক্ত আব্দুল রহমানকে এলবিডব্লিউ করেন শরিফুল। একশর আগেই অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে যায় আফগানিস্তান। সেখান থেকে দলকে কিছুটা এগিয়ে নেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। মুজিব উর রহমানের সঙ্গে তার নবম উইকেটের জুটিতে আসে ৩৬ রান।
ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ওমরজাই করেন ১ চার ও ৩ ছক্কায় ৭১ বলে ৫৬ রান। আফগানিস্তান থামে ১২৬ রানে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এটিই তাদের সর্বনি¤œ স্কোর।
শেষ দিকে পায়ের পেশিতে টান অনুভব করায় নিজের দশম ওভার করতে পারেননি শরিফুল। ফলে পাননি ক্যারিয়ারে প্রথমবার পাঁচ উইকেট নেওয়ার সুযোগ। তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের দিন আঁটসাঁট বোলিংয়ে ১০ ওভারে স্রেফ ১৩ রান খরচ করেন সাকিব।
রান তাড়ায় শুরুতেই আউট হন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তামিম ইকবালের অবর্তমানে পাওয়া সুযোগ আরও একবার কাজে লাগাতে ব্যর্থ তিনি। আগের ম্যাচের মতোই ফজলহক ফারুকির বলে ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে বোল্ড। এবার রানের খাতাই খুলতে পারেননি বাঁহাতি ওপেনার।
শুরুর ধাক্কা সামাল দেওয়ার আভাস দেন লিটন ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ফারুকিকে দারুণ পুল শটে ছক্কা মারেন লিটন। এক বল পর পুল করে চার মারেন শান্ত। তবে পরের বলেই তার অফ স্টাম্প উড়িয়ে দেন বাঁহাতি পেসার।
২৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেললেও দলকে চাপে পড়তে দেননি লিটন ও সাকিব। তৃতীয় উইকেটে ৬১ রান যোগ করেন দুজন। আগের দুই ম্যাচে উইকেটে অস্বস্তিময় সময় কাটানো সাকিব এদিন শুরু থেকেই করেন সাবলীল ব্যাটিং।
তবে তার ইনিংসের সমাপ্তিটা হতাশাজনক। মোহাম্মদ নবির শর্ট ডেলিভারি সজোরে পুল করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড়, শর্ট মিড অফে দারুণ ক্যাচ নেন শাহিদি। ৫ চারে ৩৯ বলে ৩৯ রান করেন সাকিব।
তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে বাকি পথ পাড়ি দেন লিটন। ক্যারিয়ারের দশম ফিফটি করতে তার লাগে ৫৭ বল। জয়সূচক বাউন্ডারি মারা হৃদয় অপরাজিত থাকেন ২২ রানে। সিলেটে দুই দলের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হবে শুক্রবার।