দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী আসবেন তাই নবনির্মিত কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে চলছে বিরামহীন কর্মযজ্ঞ। কাঁচঘেরা স্টেশনের বাইরের চত্বরে একটি ঝিনুক আকৃতির স্থাপনা। এই স্থাপনা ঘিরে একদল শ্রমিক কাজ করছেন। স্টেশনের ভেতরে কাজ করছেন আরেক দল শ্রমিক। প্লাটফর্মে আরেক দল। স্টেশনের বাইরে সামনে রাস্তায় ছোট ছোট বেশ ক’টি দল। বলা চলে, বহুদলীয় শ্রমিকের নিঃশ্বাসহীন কর্মযজ্ঞ। এ কাজ শেষ করতে হবে ১০ নভেম্বরের মধ্যেই। কারণ ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বহুল প্রত্যাশিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন। তাই শ্রমিকদের দম ফেলার ফুরসত নেই।
এমন কর্মযজ্ঞের মধ্যেই টাইলস মিস্ত্রি আবদুস সালাম বলেন, ‘ভাই, টাইলস লাগাচ্ছি। কথা বলার সময় নেই। রাতভর কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আসার আগেই কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে।’
শুধু কি আবদুস সালাম? তার মতোই ব্যস্ত সিমেন্ট-কংকর মাখামাখিতে শ্রমিক রহিম শেখ। রংপুরের রহিম শেখ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আসবেন। এখনও ঝিনুকের কাজ হয়নি। কাজের শেষ নেই। যা জানতে চান দ্রুত বলেন।’ পরে রহিম শেখ প্রশ্ন না শুনেই নিজের মতো করে কিছু কথা বললেন। তার সারমর্ম এমনÑ ‘আমি দীর্ঘদিন এই স্টেশনে কাজ করছি। শেষ মুহূর্তে এসে কুলিয়ে উঠতে পারছি না। দিনরাত কাজ করছি। যেকোনোভাবেই হোক, প্রধানমন্ত্রীর আসার আগেই কাজ শেষ করতে হবে। তাই নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাচ্ছি না।’
প্রতিদিনই যেন দর্শকদের ঢল নামে আইকনিক স্টেশন দেখতে। কক্সবাজার সৈকতে পৌঁছার আগে হাতের ডান পাশে কলেজের সামনে গিয়ে দুই লেনের নতুন রাস্তা ধরে ৪০০ গজ সামনে গেলেই বাঁক। বাঁক ঘুরতেই দৃশ্যমান হয় দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা আইকনিক রেলস্টেশনটি। বাংলাদেশে এমন স্থাপনা দ্বিতীয়টি আর নেই। তাই দর্শক এই স্থাপনা উদ্বোধনের আগেই আসছেন স্টেশন চত্বর ঘুরে দেখতে। মাঠে ঘাস ও কিছু ফুলগাছ লাগানো হয়েছে। যদিও এখনও প্রাণ পায়নি এসব ঘাস-গাছ। তবু দ্রুত প্রাণ ফিরিয়ে আনতে শ্রমিকদের যত্নের শেষ নেই সামনের চত্বরে।
রোববার ঝিনুকের সামনে দাঁড়িয়ে ভরদুপুরে এমন কর্মযজ্ঞ দেখার পর রামু রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেল সেই একই দৃশ্য। এখানেও শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের একজন হাবিবুল ইসলাম বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এই স্টেশনে আসবেন। এখান থেকে ট্রেনে উঠতে পারেন। তাই এখন অন্য সব স্টেশনের শ্রমিকদের এখানে আনা হয়েছে। আমরা দিনরাত কাজ করছি। এরই মধ্যে কাজ অনেক এগিয়েছে।’
রামু স্টেশনে বৈদ্যুতিক কাজে নিয়োজিত শ্রমিক দলের সদস্যরা জানালেন, তারা কাজ এরই মধ্যে শেষ করেছেন। সিগন্যাল বাতির কাজও শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে ১১ নভেম্বরের আগেই সবকিছু রেল বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। হাবিবুলের সঙ্গে কথা বলার সময় দেখা যাচ্ছিল, স্টেশন চত্বরের বাইরের ভবনে একজন লিখছিলেন ‘রামু’ শব্দটি। স্টেশনের নাম।
১০২ কিলোমিটারের এই রেলপথ নির্মাণে সরকার প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। নবনির্মিত ৯টি স্টেশনের মধ্যে কক্সবাজার অংশের কাজ এগিয়েছে বেশি। দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া স্টেশনের কাজ পুরোপুরি শেষ হতে আরও কয়েক মাস লাগতে পারে। তবে এর জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সরাসরি রেল চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন। তিনি বলেন, উদ্বোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম এরই মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। বাকি কিছু কাজ অবশিষ্ট থাকবে। সেগুলো চলমান থাকবে এবং যথাসময়ে শেষ করা যাবে।’