সুপ্রভাত ডেস্ক
দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগকারী ও অন্যান্য শিল্পখাতের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিদ্যমান ‘বৈষম্য’ দূর করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের কিছু সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে শুল্ক-কর বাড়ানো হতে পারে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বাংলাদেশ ইকনোমিক জোনস অথরিটি- বেজা) এর আওতায় বিনিয়োগকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিতে কোনো শুল্ককর না থাকলেও, এর ওপর অন্যান্য শিল্পের মতো ১ শতাংশ হারে ডিউটি আরোপ হতে পারে। একইভাবে, কনস্ট্রাকশন মেটারিয়াল বা নির্মাণ সামগ্রীতে বর্তমানে কোনো ট্যাক্স না দিতে হলেও আগামী বছর থেকে সরকার প্রযোজ্য সব ধরনের কর দিতে হবে। খবর টিবিএস’র।
এছাড়া, এখানকার শিল্পকর্তৃক ব্যবহৃত যানবাহন আমদানির ক্ষেত্রেও উঠে যেতে পারে শুল্কম্ক্তু সুবিধা। ফলে দিতে হবে স্বাভাবিক কর, যা সর্বোচ্চ ৮০০ শতাংশ। অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্ত সরবরাহের ওপর বর্তমানে ভ্যাট মওকুফ থাকলেও আসন্ন বাজেটে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হতে পারে।
তবে এখানকার জমি ইজারার (ল্যান্ড লিজ) ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের বহুল আলোচিত ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হতে পারে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, সরকার এমন উদ্যোগ নিলে তাতে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হতে পারে।
‘হঠাৎ এ ধরনের পরিবর্তন অনভিপ্রেত। এতে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস কমে যাবে’, বলেন বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের বিনিয়োগকারী রূপালী হক চৌধুরী।
ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)-এর সাবেক এই সভাপতি আরও বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন ইনসেনটিভ কমিটমেন্টের কারণে বিনিয়োগকারীরা এখানে আসেন। কিন্তু হঠাৎ করে এভাবে ট্যাক্স বাড়িয়ে দেওয়ায় খরচ বেড়ে যাবে, যা বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে পারে।’
স্থানীয় ও বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে এবং দীর্ঘদিন ধরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিল্প ইউনিটগুলোকে একত্র করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১০ সালে সরকার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠা করে।
সারদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বেজা, যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ১০ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে এবং এই অঞ্চল থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পণ্য ও পরিষেবা উৎপাদিত হবে।
বেজা’র তথ্য অনুযায়ী, সরকার ইতোমধ্যে ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে। এরমধ্যে ২৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজ চলছে এবং ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে উৎপাদন কার্যক্রম। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২৬ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। অনুমোদিত এই বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো প্রায় ১ মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
এখানে অন্তত ৮টি কোম্পানি বাণিজ্যিক উৎপাদনে রয়েছে এবং ৭০টি শিল্প বর্তমানে নির্মাণাধীন। এই শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ৫০,০০০ লোকের কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য বেজা’র আলোচ্য সুবিধা ছাড়াও এখানকার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানির ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার সুবিধা উপভোগ করে। এছাড়া, বিনিয়োগের প্রথম তিন বছরে কর ছাড় সুবিধা (ট্যাক্স এক্সেম্পশন) দেওয়া হয়; পরবর্তী ৭ বছরে ট্যাক্স দেওয়া হয় হলিডে সুবিধা।
অবশ্য বাইরের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ভ্যাট-ট্যাক্সের ক্ষেত্রে বৈষম্য থাকায় বেজা’র বাইরে থাকা বিনিয়োগকারীরা আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন আগে থেকেই।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘এমন উদ্যোগ নেওয়া হলে তা যৌক্তিক হবে। কারণ এখানে বাইরের শিল্পের সঙ্গে বৈষম্য রয়েছে।’
তবে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সরকার এ ধরনের সুবিধা দেওয়ার কারণেই বেজা’য় শিল্প স্থাপনে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসছে। অন্যান্য বিকল্পগুলো বিবেচনা করেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
‘এখন কেউ ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি করবে, বা প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এমন সময়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিকর হবে। এতে নিশ্চিতভাবেই বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে।’
অবশ্য বহুল আলোচিত বেজা’র জমি ইজারা (ল্যান্ড লিজ) সংক্রান্ত ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশে নামিয়ে আনছে সরকার।
তবে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগের সময় ল্যান্ড লিজে কোনো ভ্যাট ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) ভ্যাট আরোপ করে। নতুন করে ক্যাপিটাল মেশিনারিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে যে ব্যয় বাড়বে, সেখানে ল্যান্ড লিজ সংক্রান্ত ভ্যাট খুবই সামান্য।’