ভূঁইয়া নজরুল :
চার বছর বয়সী শাফায়েত ইসলাম। এখনো স্কুলে হাতেখড়ি হয়নি। কিন্তু বাবার সাথে চলে এসেছেন বু বু ওয়ার্ল্ডে। আর এসেই হারিয়ে যাচ্ছে শিশুদের স্বর্গরাজ্যে। খেলছে বিভিন্ন ধরনের গেম। হেলিকপ্টারের মতো একটি খেলনা রয়েছে। যেখানে বসলেই মনে হয় যেনো আকাশে উড়ছে। শাফায়েতের মতো এমন অসংখ্য শিশুদের খেলার জগৎ যেনো বু বু ওয়ার্ল্ড।
চট্টগ্রাম শহরে শিশুদের বিনোদনের জন্য তাদের নিজের মতো করে খেলার কোনো সুযোগ নেই। পার্কগুলোতে রয়েছে বড়দের প্রাধান্য। আর পরিবেশও একটি অন্তরায়। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের শিশুদের নিজেদের জন্য আলাদা কোনো জগত ছিল না। কিন্তু চট্টগ্রামে আবাসন শিল্পে সাড়া জাগানো ডেভেলপার সিপিডিএল শিশুদের জন্য সেই জগত নিয়ে হাজির হয়। নগরীর জামালখান এসএস খালেদ রোডের রিমা কনভেনশন সেন্টারের পাশে লা এরোস্টোক্রেসি রেস্টুরেন্টের ভবনের নিচতলায় গড়ে তোলা হয় বু বু ওয়ার্ল্ড নামে শিশুদের বিনোদনের নতুন এক জগত। গত সেপ্টেম্বরে চালুর পর তা শিশুদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
এতে শিশুদের জন্য ১৮টি গেম রয়েছে। আর এই গেমগুলো খেলতে হয় কয়েন দিয়ে। মেশিনে কয়েন দিলেই চলবে রাইড। কয়েনগুলো টাকা দিয়ে কিনতে হয়। প্রত্যেকটি রাইডের সাথে থাকা নির্ধারিত রাইডম্যানরা খেলার নিয়ম দেখিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এখানে থাকা রাইডগুলোর দুটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কিছু রাইড খেলতে শরীরের শক্তি অপচয় হবে এবং কিছু রাইড খেলতে মস্তিষ্ককে ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ, শিশুদের মানষিক, শারীরিক এবং বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশকে প্রাধান্য দিয়ে রাইডগুলো সেট করা হয়েছে। প্রযুক্তির ছোয়ায় এমনো অনেক রাইড রয়েছে যেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে শিশুরা বিভিন্ন মুভির আনন্দও পাবে। এসব খেলার মধ্যে আবার পুরস্কারও রয়েছে। এদের মধ্যে একটি রাইড রয়েছে জিততে পারলে শিশুরা একটি খেলনাও পাবে। অর্থাৎ, শিশুদের মনন বিকাশের সব ব্যবস্থাই রয়েছে এক জগতে।
রাইডগুলো খেলতে সর্বনি¤œ একটা থেকে সর্বোচ্চ তিনটি কয়েন পর্যন্ত লাগে। প্রতিটি কয়েন ৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। এছাড়া কিছু প্যাকেজ সিস্টেমও রয়েছে।
শিশুদের খেলতে দিয়ে অভিভাবকদের জন্য রয়েছে কিছু রাইড। যাতে অভিভাবকরাও খেলতে পারে। তা খেলতে গিয়ে নিজেদের শক্তিও অপচয় হবে। এর মাধ্যমে অভিভাবকদের অলস বসে থাকতে হবে না।
শিশুরা খেলার মাঝে বা খেলার শেষে হাঁপিয়ে উঠতে পারে। তাই এই বু বু ওয়ার্ল্ডের ভেতরেই রয়েছে রেস্টুরেন্ট সুবিধা। সুলভ মূল্যে সবাই যাতে এখানে খেতে পারে সেই ব্যবস্থাও রয়েছে। রয়েছে পর্যাপ্ত ওয়াশরুম।
করোনাকালেও থেমে নেই বু বু ওয়ার্ল্ডের কার্যক্রম। তবে প্রবেশ করতে সবাইকে মাস্ক লাগবে। আর প্রবেশের সময় হাতে স্যানিটাইজার দেয়া হবে এবং পরিমাপ করা হবে তাপমাত্রাও। একইসাথে প্রতিটি রাইড একটি শিশু ব্যবহারের পর আবার স্যানিটাইজ করে পরবর্তী শিশুর ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
যাতে শিশুরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে একান্ত নিজেদের মতো করে এই জগতে আসতে পারে সেজন্য প্রাইভেট বুকিং পদ্ধতিও চালু করেছে। এক ঘণ্টার জন্য শুধু নির্ধারিত একটি পরিবারকে পুরো বু বু ওয়ার্ল্ডের রাইডগুলো খেলার জন্য দেয়া হবে। সকাল ১১টা থেকে বিকাল তিনটার মধ্যে এই সময় রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, এই সময়ের মধ্যে কেউ চাইলে এক ঘণ্টার জন্য বুকিং দিতে পারবে। তখন আর অন্য কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না। শুধু বুকিং দেয়া পরিবারের সদস্যরা প্রবেশ করতে পারবে। মাত্র এক হাজার টাকায় ৪০টি কয়েন দেয়া হবে এ সময়ের জন্য। সকাল ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে বু বু ওয়ার্ল্ড।
সিপিডিএলের চিফ বিজনেস অফিসার জিয়াউল হক খান বলেন, শিশুদের নিজেদের জন্য একটি জগৎ গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম। যেখানে শিশুদের হাত ধরে অভিভাবকরা আসবে। চালুর পর অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি। এখন করোনাকালে শিশুরা ঘরবন্দী, তাই তাদের মনন বিকাশের জন্য সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রেখেও যাতে বিনোদনের সুযোগ দেয়া যায় সেই চেষ্টা করছি।’
তিনি আরো বলেন, সম্পূর্ণ শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত এই জগতে শিশুরা নিজেদের মতো করে বিচরণ করতে পারবে। শিশুদের মনন বিকাশে আরো কিছু যুক্ত করা যায় কিনা সেই বিষয়টিও ভাবনায় রয়েছে।