সুপ্রভাত বিনোদন ডেস্ক »
‘ইয়াশের তো অভিনয় জগতেই বেড়ে ওঠা। যখন ও খুব ছোট, তখন নরেশ দা আর অপু দিদির সঙ্গে প্রায়ই শুটিং সেটে আসত। চুপচাপ বসে সবার অভিনয় দেখত। শিল্পীরা কীভাবে চরিত্রের সঙ্গে মিশে যান, কীভাবে গল্প বাস্তবের রূপ চেষ্টা করেন– তা দেখতে দেখতেই অভিনয় অনেকটা রপ্ত করে ফেলেছিল; যার প্রামাণ ওর শৈশবেই আমরা পেয়েছি। শিশু চরিত্রে দারুণ অভিনয় করে অবাক করে দিয়েছিল ইয়াশ। এও বুঝিয়ে দিয়েছিল, অভিনয় জগতে আগামী সময়টা ওর।’
কথাগুলো ইয়াশ রোহান সম্পর্কে এক গুণী অভিনেত্রীর। শুধু সেই অভিনেত্রী নয়, অভিনয় জগতের অনেকের কাছেই ইতিবাচক কথা শোনা গেছে তরুণ এ অভিনেতাকে নিয়ে। সবার কথা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট– ইয়াশ রোহান কাজের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করে চলেছেন। খ্যাতির মোহে বিনোদন দুনিয়ায় পা রাখেননি। তিনি সুদূরের যাত্রী। অভিনয়ে নিজেকে ভেঙে প্রতিবার নতুনভাবে পর্দায় তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। মাধ্যম নিয়েও খুব একটা ভাবেন না; কারণ অভিনয়ই তার কাছে মুখ্য।
এ কথা ইয়াশ নিজেও স্বীকার করেন। বলেন, একজন অভিনেতা সব মাধ্যমেই অভিনয় করতে পারেন। বড় পর্দা, ছোট পর্দা এবং ওটিটি– এ তিন মাধ্যমে আলাদা করে দেখার প্রয়োজন হয় না। নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ– সব জায়গাতেই তো আমাকে অভিনয়ই করতে হয়। তাহলে কেন মাধ্যম বিচার করব? সেটা আগেও করিনি, এখনও চাই না কাজের চেয়ে মাধ্যমকে বড় করে দেখতে। বরং যে গল্প ও চরিত্র দর্শকের সামনে তুলে ধরছি, সেটা তাদের মনে ছাপ ফেলল কিনা– সেটাই বড় করে দেখার।
ইয়াশের এ সোজাসাপ্টা কথা থেকে বোঝা যায়, অভিনেতা হিসেবে দর্শকমনে ছাপ রেখে যাওয়াই তার প্রধান চাওয়া। কথায় আছে, ‘শোণিত ধারায় যা বহমান, তা প্রকাশ্যে চলে আসে যখন-তখন’। ইয়াশের বেলায় সেটাই হয়েছে। পারিবারিক সূত্রেই অভিনয় যে তার রক্তে মিশে গেছে। তাই তো প্রকৌশলী হয়েও অভিনয়কেই পেশা হিসেবে বেছে নিতে এতটুকু দ্বিধা করেননি। শুধু তাই নয়, একের পর এক কাজের মধ্য দিয়ে এও প্রমাণ করেছেন তিনি বরেণ্য দুই অভিনেতা-অভিনেত্রী নরেশ ভূঁইয়া ও শিল্পী সরকার অপুর যোগ্য উত্তরসূরি। গুণী নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম আতশ কাচের নিচেও ইয়াশ সম্ভাবনাময় অভিনেতা হিসেবেই ধরা দিয়েছিলেন। তাই তো ‘স্বপ্নজাল’ সিনেমায় পরীমনির বিপরীতে এই তরুণকে বেছে নিতে এতটুকু দ্বিধা করেননি।
অন্যদিকে ইয়াশও তার প্রথম সিনেমাতেই রেখেছিলেন সম্ভাবনার স্বাক্ষর। যে কারণে তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে ‘স্বপ্নজাল’ তার চলার পথ সহজ করে দিলেও জনপ্রিয়তার মোহে গৎবাঁধা গল্পের কোনো সিনেমায় অভিনয় নিয়ে আপত্তি ছিল তার। খেয়াল করতে দেখা যায়, পরবর্তী সময়ে ‘মায়াবতী’, ‘পরাণ’, ‘দেশান্তর’, ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’, ‘বুকের ভিতর আগুন’, ‘ফাতিমা’সহ যে কয়টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ওয়েব সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন, সেখানে খোলনলচে বদলে নিজেকে নতুনভাবে তুলে ধরার চেষ্টা ছিল।
যদিও তার প্রতিটি নাটকের গল্পই ভিন্ন ধাঁচের এমন দাবি করা যায় না; তবে অভিনয়ে যে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা ছিল তা অনেকটাই স্পষ্ট। ‘নির্বাসিত’, ‘চিন্থ’, ‘আগন্তুক’, ‘রাইড শেয়ারিং’, ‘অগ্নিগিরি’, ‘অবাক কাণ্ড’, ‘সে বসে একা’, ‘সম্ভবত প্রেম’, ‘শেষ কিছুদিন’, ‘দত্তক’, ‘প্রেম এসেছিলো একবার’, ‘নবীন উদ্যোক্তা’, ‘ভিলেন’, ‘এসো বসে একসাথে খাই’, ‘অভিশাপ’ থেকে শুরু করে ‘ফরগেট মি নট’সহ আরও বেশ কিছু নাটক, টেলিছবি, ওয়েব সিরিজ ও সিনেমা তার পরিণত শিল্পী ওঠার প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে।
ইয়াশ তাই নিঃসংকোচে বলেন, অভিনয়ের তৃষ্ণা মেটানোর মধ্য দিয়েই পরিণত শিল্পী হয়ে ওঠাই আমার লক্ষ্য। এর বেশি কিছু চাওয়ার নেই, এটুকুই আমার স্বপ্নের সীমারেখা।