শিয়াল ও বন্ধুত্বের শক্তি

আজহার মাহমুদ »

এক দেশে ছিল এক সুন্দর বন, যেখানে নানা রকমের পশুপাখি মিলেমিশে বাস করত। সেই বনের মাঝে ছিল এক বড় আমগাছ, যার ছায়ায় সবাই বিশ্রাম নিত। বনের প্রাণীদের মধ্যে ছিল খরগোশ, কাঠবিড়ালি, কচ্ছপ, হরিণ, আর এক ময়না পাখি। তারা সবাই ছিল খুব ভালো বন্ধু।
একদিন, বনের রাজা বাঘ ঘোষণা দিলেন যে, তাদের বনে এক ভয়ঙ্কর বিপদ আসছে। নদীর ওপারের এক গুহায় ভয়ানক এক শিয়াল এসেছে, যে নাকি সবাইকে ভয় দেখাচ্ছে আর ছোট প্রাণীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সবাই ভয়ে থর থর করে কাঁপছিল। তখন খরগোশ বলল, ‘আমরা সবাই মিলে যদি বুদ্ধি খাটিয়ে এই বিপদ থেকে বাঁচতে পারব।’
কাঠবিড়ালি বলল, ‘কিন্তু আমরা ছোট ছোট প্রাণী, কীভাবে পারব?’
কচ্ছপ বলল, ‘যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করি, তবে সব সম্ভব। বন্ধুত্বের শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি। চলো পরিকল্পনা করি একটা।’
তারা সবাই মিলে একটা পরিকল্পনা করল। ময়না শিয়ালের গতিবিধি নজর রাখবে, হরিণ তার গতি কাজে লাগিয়ে দ্রুত খবর পৌঁছে দেবে, খরগোশ আর কাঠবিড়ালি জঙ্গলে কিছু ফাঁদ তৈরি করবে আর কচ্ছপ ধীরে ধীরে গুহার কাছের পথ বন্ধ করে দেবে।
পরিকল্পনা মতো কাজ শুরু হল। ময়না শিয়ালকে অনুসরণ করল এবং জানতে পারল, সে আজ রাতে খাবারের খোঁজে বের হবে। সেই খবর ময়না হরিণকে দিল, আর হরিণ ছুটে গিয়ে বাকিদের জানাল। এরপর সবাই মিলে একটা গভীর গর্ত খুঁড়ল এবং সেই গর্তটা পাতা দিয়ে ঢেকে রাখল।
রাতে শিয়াল যখন শিকারের উদ্দেশ্যে বের হল, তখন পাতা দিয়ে ঢাকা গর্তটির ওপর পা দেওয়ার সাথে সাথে গর্তে পড়ে গেল! সে যতই চেষ্টা করল, বের হতে পারল না। সকালের আলো ফুটতেই বনের সকল প্রাণী এসে শিয়ালকে দেখে আনন্দে নাচতে লাগল।
শিয়াল বুঝতে পারল যে সে ভুল করেছে। সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘আমি আর কখনো কাউকে ভয় দেখাব না। আমাকে ক্ষমা করে দাও!’
খরগোশ বলল, ‘তুমি যদি সত্যি বদলাতে চাও, তাহলে আমাদের বনের নিয়ম মেনে চলতে হবে।’
শিয়াল রাজি হল এবং সবাই মিলে তাকে মুক্ত করে দিল। এরপর থেকে সে আর কাউকে ভয় দেখায়নি, বরং অন্য প্রাণীদের সাহায্য করত।
বাঘ মামা এসে বললেন, ‘তোমরা সবাই প্রমাণ করেছ যে বন্ধুত্বের শক্তি সত্যিই অসাধারণ! যদি আমরা একসঙ্গে থাকি, তবে কোনো বিপদই আমাদের ছুঁতে পারবে না।’
এরপর থেকে বন ছিল নিরাপদ, আর সবাই একে অপরকে সাহায্য করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হল। সবাই বুঝল, দলবদ্ধভাবে থাকলে কোনো বিপদই ভয়ংকর নয়।
শিক্ষা: একতাই বল, আর বন্ধুত্বের শক্তি দিয়ে সব বিপদ জয় করা সম্ভব।