নিজস্ব প্রতিবেদক »
শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা, শ্রমিকদের মারধর, পাওনা না দেওয়া ও ইয়ার্ডের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাহাজ ভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরাম। বিগত দিনে সংগঠিত সকল দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে ১২ দফা দাবিও জানিয়েছেন তারা।
গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে দুর্ঘটনায় অব্যাহতভাবে শ্রমিক নিহত ও আহতের প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরে কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনের আহ্বায়ক তপন দত্ত।
এসব দাবির সমর্থনে ১০ এপ্রিল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও শ্রমিক সমাবেশ এবং সম্প্রতি যে ইয়ার্ডে শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে তার সামনে একই কর্মসূচি পালন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের কমসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে তপন দত্ত বলেন, ‘গত ১ ফেব্রুয়ারি ইয়ার্ডে কাজ করার সময় লোহার পাত পড়ে সুজন নামে একজন শ্রমিক নিহত হন। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়না তদন্তে দুর্ঘটনায় মুত্যুর বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে নানামুখি অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে শিল্প মন্ত্রণালয়। অতীতের মতো এবারের কমিটিতেও কোন শ্রমিক প্রতিনিধিকে রাখা হয়নি। এমনকি গঠিত তদন্ত কমিটি শ্রমিক পক্ষের কোন বক্তব্য নেয়নি। ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও এখনো কমিটির রিপোর্টের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে তদন্ত রিপোর্ট নিয়েও শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা ও সংশয় তৈরি হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনার পর শিল্প মন্ত্রণালয় ইয়ার্ড বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও মালিকপক্ষ তা পালন না করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। তাছাড়া গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সুজন নামে এক শ্রমিককে সীতাকু-ের মাদাম বিবিরহাট এলাকার একটি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে চাকরিচ্যুত করা হয় জানিয়ে তপন দত্ত বলেন, ওই শ্রমিক প্রতিকার চেয়ে মালিক বরাবর গ্রিভান্স দরখাস্ত দিলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। ফোরামের পক্ষ থেকে কয়েকবার মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেও কোন সুরাহা করা যায়নি।’
১২ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা এবং আহত হয়ে কাজে অক্ষমদের ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান, বিএসবিআরএ-এর ব্যবস্থাপনায় শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ সংরক্ষণ, ইয়ার্ড সমূহে আধুনিক, নিরাপদ যন্ত্রপাতি ব্যবহার নিশ্চিত করা, কাটার আগে জাহাজকে পূর্ণাঙ্গভাবে বর্জ্যমুক্ত করা, দেশের প্রচলিত শ্রম আইন ও জাতীয়-আন্তর্জাতিক কনভেনশন স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিতকরণ, ২০১৮ সালের ঘোষিত মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা এবং দৈনিক মজুরি ৬১৫ টাকা কার্যকর করা, ইয়ার্ডকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সফর আলী, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দিন, টিইউসি চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার কামাল খান, শফি বাঙালি, রিজওয়ানুর রহমান খান, কেএম শহিদুল্লাহ, মো. নুরুল আবসার, ফজলুল কবির মিন্টু ও মোহাম্মদ আলী।