চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার পাস ও জিপিএ প্রাপ্তির হার কমেছে। এবার পাস করেছে ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৪৫০ জন পরীক্ষার্থী। গতবছরের চেয়ে এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে। গত বছর এই হার ছিল ৮৭.৫৩ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৮ হাজার ৬৬৪ জন।
সারাদেশেও পাসের হার কমে হয়েছে ৮০.৩৯ শতাংশ। দীর্ঘ অপেক্ষার পর স্কুলের গণ্ডি অতিক্রম করা এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। এই হিসাবে এবার পাসের হার কমেছে ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ পয়েন্ট। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৮৬ হাজার ২৪ জন। গত বছর একই পরীক্ষায় পাস করেছিল ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এবার গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে ভালো করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক ফলাফলে। এবার সাধারণ গণিত বিষয়ে সবচেয়ে কম (৮৭.১১ শতাংশ) শিক্ষার্থী পাস করেছে চট্টগ্রামে। এরপরই কম পাস করেছে ইংরেজিতে। বিষয়টিতে পাসের হার ৯০.৪১ শতাংশ। গণিত ও ইংরেজি ছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলোতে পাসের হার ৯৬ শতাংশের ঊর্ধ্বে। কয়েকটি বিষয়ে ৯৯ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী পাস করেছে।
দেখা যাচ্ছে আমাদের শিক্ষা পদ্ধতির ত্রুটি বা দুর্বলতার কারণে পাসের হার কমছে। বিগত কয়েক দশক ধরে এ বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। শিক্ষকের অভাবে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দক্ষ শিক্ষকের অভাবে ইংরেজি ও গণিতের পাঠদান ব্যহত হচ্ছিল। অনেক স্কুলে বিজ্ঞানের শিক্ষকও নেই, থাকলেও অনেক স্কুলে বিজ্ঞানাগার নেই। শহরের চেয়ে গ্রামের স্কুলগুলোর সমস্যা প্রকট। এই সমস্যা পার্বত্য জেলাগুলোতে ভয়াবহভাবে প্রকট। আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে, শহরের চেয়ে গ্রামে, গ্রামের চেয়ে পার্বত্যাঞ্চলে পাসের হার কম হওয়ার কারণ হিসেবে অনেকে দারিদ্র্যকে দায়ী করেছেন। অর্থাভাবে কোচিং করাতে না পারায় অনেকে গণিত ও ইংরেজিতে অকৃতকার্য হয়েছে। এক্ষেত্রেও শিক্ষা ব্যবস্থাপনার ত্রুটির বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। এ বছরের ফলাফলে মহামারীকালের প্রভাব আছে বটে তাই বলে শিক্ষা ব্যবস্থার এই দুর্বলতার কথা না তুলে পারা যাবে না।
পরিবর্তনশীল ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমাদের সন্তানদের যদি মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে না পারি তাহলে এরচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কিছু হতে পারে না। এবারের ফলাফলের এই চিত্র থেকে যদি আমরা শিক্ষা না নিই তাহলে সামনে শিক্ষাক্ষেত্রে আরও হতাশাজনক পরিস্থিতি তৈরি হবে। আমরা আশা করব শিক্ষা মন্ত্রণালয় সক্রিয় হবে এবং এ বিষয়ে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত নেবে।