নিজস্ব প্রতিবেদক »
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের ঝুঁকিপূর্ণ কক্ষে তাদের পড়াশোনা। মূল ক্যাম্পাসের প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরত্বে কাটে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। তাও নেই বাস, নেই হল, নেই ক্যান্টিন, নেই পর্যাপ্ত ওয়াশরুমের ব্যবস্থা। এমনি বিশুদ্ধ পানির জন্যও থাকে শিক্ষার্থীদের হাহাকার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদে অন্তর্ভুক্ত থাকা সত্ত্বেও যথাযথ মর্যাদা পায়নি চারুকলা ইনস্টিটিউট। আর তাই পাঁচদিন ধরে ক্লাস বর্জন করে ২২ দফা দাবি পূরণের আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। সবকটি দাবি পূরণ না হলে চলবে তাদের আন্দোলন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বড় বাজেটের কাজে হাত দিতে নারাজ। তাই শিক্ষার্থীরা চান বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে তাদের ব্যবস্থা করা হোক।
বুধবার (২ নভেম্বর) থেকে ২২ দফা দাবিতে ক্লাস বর্জন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি প্রশাসনের সাথে বারবার কথা বলা হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বিশেষ করে কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর কারণে ঝড়ে ইনস্টিটিউটটির ক্লাসরুম থেকে শুরু করে হলের দেওয়াল ও ছাদ থেকে আস্তর খসে পড়ে। সিলিং থেকে ফ্যান পড়ে গেছে। এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কয়েক দফা সাক্ষাৎ করেও সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি হলো, ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ ক্লাস রুম, ছাত্র-ছাত্রী হল ও ডাইনিং ব্যবস্থা, প্রতিটা ভবনে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরা, নিজস্ব বাসের ব্যবস্থা করা, প্রতিটি ভবনে পর্যাপ্ত টয়লেট, ক্লাসের বরাদ্দকৃত আর্ট ম্যাটেরিয়ালের ব্যবস্থা করা, বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বইয়ের ব্যবস্থা করা, অকেজো পড়ে থাকা জেনারেটর চালু করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, খেলার মাঠ, শিক্ষার্থীদের জন্য ফটোকপি মেশিন, প্রিন্ট ও স্টেশনারি সামগ্রীর ব্যবস্থা করা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ (মশা, পানি জমা, ময়লা ইত্যাদি) নির্মূলকরা, শ্রেণিকক্ষে বিদ্যুৎ সংকট দূর করা, ছাত্র-ছাত্রী মিলনায়তনের ব্যবস্থা করা, সেমিনারের পরিধি বাড়ানোসহ প্রজেক্টর ও পর্যাপ্ত সাউন্ড সিস্টেম নিশ্চিত করা, পুরো প্রাঙ্গণের ওয়াইফাই সংযোগ নিশ্চিতকরা, প্রার্থনাগারের ব্যবস্থা করা, নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ধ্যার পর পর্যাপ্ত আলোকায়ন, শিক্ষার্থীর জন্য লকারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, কম্পিউটার ল্যাবে পর্যাপ্ত কম্পিউটার ও প্রজেক্টর বসানো এবং মডেল সংকটের সমাধান করা।
এ নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন সায়েদ কবির সুপ্রভাতকে বলেন, চারুকলা ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। এমনকি আমরা কোনো সুযোগ-সুবিধাও ঠিকভাবে পাই না। এখন এখানে দেওয়াল ও ছাদের আস্তর খসে পড়ছে। হলে থাকার মতো পরিবেশ নেই। পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই। আমরা রোববার (গতকাল) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসেছি। কিন্তু তারা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সমাধান করতে রাজি নন। বড় বাজেট করা এ মুহূর্তে কষ্টকর। এটি আমরাও বুঝতে পারছি। কিন্তু আমরা ২২ দফা দাবি পূরণ না হলে ক্লাসরুমে যাবো না। আর যদি আমাদের সব দাবি পূরণ করতে না পারে, তাহলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়া হোক। মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করলে আমাদের আর কোনো দাবি থাকবে না।
এ নিয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দল আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। উপাচার্য তাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। এখন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা দেখছি না।’