এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের কারণে গত ১৭ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এবার এক মাসের অচলাবস্থা কাটিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগামী রোববার থেকে খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও পুরোদমে চালুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো নতুন সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ১১ সেপ্টেম্বর শুরু হবে।
আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর ৭ আগস্ট থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও স্কুলগুলোতে ভয় ও আতঙ্কে উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগামী রোববার থেকে খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে নতুন করে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। গতকাল জারি করা এই নির্দেশনায় বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে গত বুধবার এক আদেশে পুরোদমে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে শ্রেণি কার্যক্রম চালুর নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তবে সরকার পরিবর্তনের পর সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিগত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া উপাচার্য, সহ–উপাচার্যসহ শীর্ষ পর্যায়ের পদ থেকে প্রায় সবাই পদত্যাগ করেছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব পদে এখনো কাউকে নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হতে পারে। প্রশাসনিক এসব পদে নতুনদের নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে। এরমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, এখন বৈধ শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। সব শিক্ষার্থী হলে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পরিবেশ তৈরি হলেই ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া শুরু হবে। অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা কমিটিগুলো নিয়েও জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন অনেকে। কারণ এসব পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়েছে গত সরকারের আমলে। অনেক কমিটির বিরুদ্ধে নানা সময়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। সে ক্ষেত্রে সরকারি স্কুল-কলেজের মতো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পরিচালনা কমিটি ব্যবস্থা বাদ দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
তা যাক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সরকারি এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। আন্দোলনের কারণে প্রায় একমাস শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। এটি পুষিয়ে দিতে অনেক সময় লাগবে। মহামারির দুই বছর বন্ধ থাকায় আমাদের শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের ওপর এর অভিঘাত এখনো কাটেনি। ফলে যেকোনো উপায়ে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমকে নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হবে। শিক্ষা বিঘ্নিত হলে যে ক্ষতি হবে তা অর্থ দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। কাজেই সরকারের কাছে দাবি জানাই, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শীর্ষপদে নিয়োগ দিয়ে তা দ্রুত চালু করার উদ্যোগ নেওয়ার।