নগর পূজা পরিষদের সংবাদ সম্মেলন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবে নিরাপত্তা নিয়ে পূজা কমিটিগুলো উদ্বিগ্ন ও সনাতন সম্প্রদায় শঙ্কিত। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি পূজাকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করতে পারে।
গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন আশঙ্কার কথা জানান সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার। এছাড়া তিনি সরকারের কাছে ১২ দফা দাবি তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও মহানগরীর জে এম সেন হল প্রাঙ্গণসহ ১৬টি থানায় ব্যক্তিগত/ঘট পূজাসহ প্রায় ২৭৩টি পূজাম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। শারদোৎসবে নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত অর্থাৎ পূজাম-পে নিরাপত্তা রক্ষায় ম-প প্রাঙ্গণে স্থায়ী পুলিশ-আনসার না দেয়ার সিদ্ধান্তে পূজা কমিটিগুলো উদ্বিগ্ন এবং সনাতন সম্প্রদায়ের জনগণ আরো শঙ্কিত। প্রতিবছর পূজা চলাকালীন পূজাম-প পাহারায় স্থায়ীভাবে ৪-১০ জন পুলিশ-আনসার এবং ৫-১০ জন ভিডিপি নিয়োগ দেয়া হতো। কিন্তু তা এবার রদ করে শুধু টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে নিরাপত্তা কতটুকু হবে তা ভাবিয়ে তুলেছে।’
চন্দন তালুকদার বলেন, ৭৫’এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে এদেশে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন বার বার হয়েছে। তারপর থেকে আজ অবধি পুলিশবিহীন পূজা করিনি। সে কারণে বলতে চাই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি তারা হয়ত পূজাকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি এবং সামাজিক পূজা করার ক্ষেত্রে বিঘœ সৃষ্টি করতে পারে। সে আলোকে মহানগর পূজা পরিষদের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন ও দাবি জানিয়েছি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাত ৯টায় মন্দির ও পূজা বন্ধ এটি কে বা কারা করছে জানি না। এরকম কোনো নির্দেশনা পায়নি। উৎসব, পূজায় মানুষের আবেগ কাজ করে। কোভিড-১৯ এর কারণে চেষ্টা করব কমসংখ্যক মানুষ যাতে বের হয়। এবার কোনো থিম পূজা, গান-বাজনা, আলোচনা সভা কিছুই হবে না।’
‘শারদীয় দুর্গোৎসবে চারদিনের সরকারি ছুটি দীর্ঘদিনের দাবি। গতবছর এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। হয়ত ৪ দিন হবে না ঐচ্ছিক ছুটি ১ দিনের সাথে আরেকটা দিন বাড়িয়ে ২ দিন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি এবং সেটা বছরখানেকের মধ্যে হতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যারা সরকারি ছুটির জন্য মিটিং-মিছিল করছেন তারা একটা সংগঠনের সাথে যুক্ত। আমরা মনে করি সরকার ও প্রশাসনের সাথে যুদ্ধভাব দেখিয়ে রাস্তায় নামিয়ে মানববন্ধন করে যদি দাবি আদায় করা যেত তাহলে অনেক কিছু হতো। আমরা দাবি এখানে করছি আবার সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও করেছি। যারা এসব করছে তারা এগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ।’
এছাড়া তিনি ১২ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবি সমূহের মধ্যে রয়েছে-৭২’র সংবিধানের আলোকে সকল সম্প্রদায়ের সম অধিকার নিশ্চিত করা, হিন্দু সম্প্রদায়ের মঠ, মন্দির, ঘরবাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, লুটপাট, হামলা ভাঙচুরসহ সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের মানবতাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শাস্তির ব্যবস্থা করা, দুর্গোৎসবকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান এবং শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৪ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা, প্রায় তিন কোটি সনাতনী সমাজের অন্যতম দুঃখ সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টিকারী বাতিলকৃত শুত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইন কার্যকর করে অবিলম্বে সম্পত্তি প্রকৃত ভূমি মালিকদের ফেরত দেওয়া, সেনা-বাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ড, পুলিশ প্রশাসন ও সচিবালয়সহ সকল সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের আনুপাতিকহারে নিয়োগ, সরকারি সংস্কৃত কলেজ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন, বাংলাদেশে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডশনে উন্নীতকরণ, চট্টগ্রাম তীর্থভূমি সীতাকু-কে জাতীয় তীর্থস্থান ও ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে জাতীয় মন্দির ঘোষণা, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাজনীতি ও নির্বাচনে ধর্ম এবং সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, সীতাকু-ে চন্দ্রনাথ ধাম এর উন্নয়ন কক্সবাজার আদিনাথ মন্দিরকে সাগরের ভাঙন থেকে রক্ষা, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সনাতন ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োাগ ও তাদের বেত কাঠামো বৈষম্যের অবসান এবং সব বিদ্যালয়ে সনাতন ধর্মের ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির সুযোগ দেয়া এবং শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালীন সরকারি-বেসরকারি সকল প্রকার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রীপ্রকাশ দাশ অসিত, সাবেক সভাপতি সাধারণ ধর, বিমল দে, সহ-সভাপতি অধ্যাপক অর্পণ কান্তি ব্যানার্জী, রানা বিশ্বাস, লায়ন দিলীপ ঘোষ, সুমন দেবনাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিথুন মলি¬ক, সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দত্ত, দপ্তর সম্পাদক দোলন দেব, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক সুকান্ত মহাজন টুটুল, অ্যাডভোকেট নটু চৌধুরী, অ্যাডভোকেট নিখিল কুমার নাথ, পরিমল দেব, বিপ¬ব সেন, দোলন দেব, দীপংকর দেবনাথ, স্ট্যালিন দে, দীপ্ত সিংহ, লিটন শীল প্রমুখ।