শব্দদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছেন রাজধানীর অধিকাংশ ট্রাফিক পুলিশ। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে স্পেশালাইজড হসপিটাল অ্যান্ড নার্সিং কলেজের চিকিৎসক ডা. আবির্ভাব নাহা তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, শ্রবণ সমস্যাসহ নানা শারীরিক জটিলতা ও মানসিক সমস্যায় ভোগেন তারা। এর মধ্যে ১০০ সদস্যের কান পরীক্ষায় দেখা যায়, ৬৪% ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত, ৫৬ শতাংশ কানে সার্বক্ষণিক বিদঘুটে শব্দ পান, ৪০ শতাংশ ঘুমের মধ্যে শব্দের মাত্রা অনুভব করেন, শতকরা ২৭ জন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় থাকেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. হুসনে কমর ওসমানী সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সবসময় তীব্র শব্দের মধ্যে কাজ করেন, তাই তাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বেশি। তাদের ক্ষতির মাত্রা কমাতে যে স্থানে শব্দ কম সেসব স্থানে বদলি করতে হবে। অন্যথায় তাদের পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে যাবে। নিজের গবেষণার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে ৩৫-৪০ বছরের মধ্যেই শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তাদের জন্য তিনি এয়ার প্লাগ ব্যবহারের কথা বলেন।
গবেষণাটি ঢাকা মহানগরী নিয়ে হলেও দেশের বড় নগরগুলিতে এ সমস্যা কমবেশি প্রকট। কেবল ট্রাফিক পুলিশ সদস্য নয়, নগরবাসীও শব্দদূষণে জর্জরিত। উন্মুক্ত স্থানে, পথের পাশে যারা কাজ করেন কিংবা ছোটখাট দোকান করেন কিংবা রাস্তার পাশের দোকানের কর্মচারীরা শব্দদূষণের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন।
শহরে ও গ্রামে যত্রতত্র মাইকের আওয়াজ, হোটেল রেস্তোরাঁয় নানা ঝনঝনানির শব্দ কমিউনিটি সেন্টারগুলিতে উচ্চশব্দে গান, আতশবাজির শব্দ, পাড়ার অনেক বাড়ি, উন্মুক্ত স্থানে সভাÑঅনুষ্ঠানে মাইকের বিকট আওয়াজ, এর সাথে আছে যানবাহনের হর্ন, বিচিত্র শব্দ, জনকোলাহল, জোরে কথা বলা, হঠাৎ শব্দ করাÑএসব বিষয়ও শব্দদূষণ ঘটায় ব্যাপকভাবে। এতে বৃদ্ধ, শিশু, গর্ভবতী মহিলা, অসুস্থ রোগী বিশেষ করে হার্টের রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। এ ধরণের পরিস্থিতি মানসিকভাবেও মানুষদের অসহায় করে তোলে। অনেকে ¯œায়ুরোগেও ভোগেন শব্দদূষণের কারণে।
শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬অনুযায়ী শব্দের মানমাত্রা নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০, শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ও রাতে ৭০ ডেসিবলের বেশি হতে পারবে না।
হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকায় যানবাহন ও অন্যান্য কারণে উচ্চশব্দের বিরাম নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন মানুষ ৮০ ডেসিবল শব্দের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। শব্দের মাত্রা এর বেশি হলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। গবেষণায় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যে শব্দমাত্রা নেওয়া হয়েছে তার গড় ১১০ ডেসিবল।
আমরা মনে করি, জনগণকে শব্দদূষণ থেকে রক্ষা করতে শব্দদূষণ আইনের কার্যকর প্রয়োগ প্রয়োজন। অথচ এটি হতে দেখা যায় না। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া, পরীক্ষার সময় মাইকের আওয়াজের বিরাম নেই। শব্দদূষণ একটি সামাজিক সমস্যাও বটে।
আমরা মনে করি, এই গবেষণার আলোকে দেশের বড় বড় নগরগুলির শব্দদূষণের মাত্রা নিয়ে জরিপ চালানো উচিত এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শব্দদূষণ রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের যেভাবে শব্দদূষণের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে হয়, সে ব্যাপারটিতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে শহরে ও গ্রামে শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে প্রচারÑপ্রচারণা চালানো আবশ্যক। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা নিতে পারেন। আইনের যথাযথ প্রয়োগ হলে, জনগণ সচেতন হলে শব্দদূষণে ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতর, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীরও ভূমিকা থাকা চাই।
মতামত সম্পাদকীয়