কদিন পরপরই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে, কখনো চাল, কখনো তেল, কখনো বা পেঁয়াজ, চিনি, ডাল, মশল্লা, কিছুতেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না, সরকারের নিয়ন্ত্রণ কোথায়, মানুষ বুঝতে পারছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাম সমন্বয়ের প্রচেষ্টা কমিটি গঠনের মধ্যেই রয়েছে। বাজারে কোন প্রভাবই পড়ছে না। ভোজ্য তেলের মূল্যবৃদ্ধি অনেকটা অস্বাভাবিক ৮৮ টাকা লিটার সয়াবিন তেল ১৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বোতল প্রতি লিটার ১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।
দেখা যাচ্ছে, প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ওঠানামা করলেও তার প্রভাব আমাদের বাজারে পড়ে সামান্য। আর দাম একবার বাড়তে থাকলে সেটা সহজে কমার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। আবার দেখা গেল আমদানিকারক বা পাইকারে কিছুটা দাম কমলেও খুচরা বাজারে তার প্রভাব সহজে পড়ে না। দফায় দফায় ভোক্তাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে অবিশ্বাস্য মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে সকল স্তরের ব্যবসায়ী। মোটা চালের দাম বেশ কিছুদিন থেকে বাড়তি হলেও কমার কোনো লক্ষণ নেই যদিও চাল এখন আমদানি শুরু হয়েছে। বাজারে তার প্রভাব পড়ছে না।
বাজারে অস্থিরতা দূর করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ট্যারিফ কমিশনকে দায়িত্ব দিয়েছে। তারা এখন কেবল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে। মূল কাজ শুরু করতে করতে বাজার আরো কয়েক দফায় অস্থির হয়ে উঠবে। সরকার পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের নানা সুবিধা, ভ্যাট, শুল্ক কমালেও পরিস্থিতির উন্নতি হয় না। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট যেভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ কিংবা দ্রব্যমূল্য বাড়ায়, সরকারের সেখানে কিছুই করতে পারে না।
টিসিবির হিসেবেই গত ১ বছরে দেশে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৩২ শতাংশ। পাম অয়েলে ২২.৮৪ শতাংশ। আর বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশে গত ১ বছরে চালের দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। সরকার ১৫টি নিত্যপণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সঙ্গতি রেখে বেঁধে দেয়ার চেষ্টা করলেও সফল হওয়ার লক্ষণ পরিদৃষ্ট নয়। সরকার নিকট অতীতে আলু, পেঁয়াজ, তেলের দাম বেঁধে দিলেও ব্যবসায়ীরা তা মানেনি।
দেশে এই যে ক্রমাগত নিত্যপণ্যের দাম বাড়তির দিকে, এর ফলে মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। করোনার কারণে অনেকের জীবিকার সংস্থান নেই, চাকরি চলে গেছে বিপুল সংখ্যক মানুষের। এ পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্যের চাপে মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে দিশেহারা। আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসের দাম বাড়তি কমতি আছে কিন্তু তার সঠিক তথ্য পরিসংখ্যান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে আমাদের দেশের মতো দ্রব্যমূল্য এত দফায় দফায় বাড়ার নজির আছে কি! ব্যবসায়ীরা নানা কায়দা করে সুবিধা বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টায় আছে কিন্তু ভোক্তাসাধারণের দ্রব্যমূল্যের চাপ থেকে কখনো রেহাই নেই। সামনে রমজান, এ সময় নিত্যপণ্যের চাহিদা বাড়তি থাকে। করোনার বিরূপ প্রভাবও আছে। এখন থেকেই সরকারকে চাহিদা অনুসারে আমদানির ব্যবস্থা করে সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়