লাখো পর্যটক বরণে প্রস্তুত কক্সবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

করোনা সংক্রমণের কারণে বন্ধ ছিল দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দুই ঈদুল ফিতর ও আযহার ঈদও ছিল বিধিনিষেধের আওতায়। সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপের কারণে ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠে। তাই এবার পর্যটন ব্যবসায়ীরা লাখো পর্যটক সমাগমের আশা করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের ১৯ আগস্ট করোনার বিধিনিষেধ শিথিল করে সমুদ্রসৈকত পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তবে এসময়ে কয়েকটি নেতিবাচক ঘটনায় ছেদ পড়ে এই শিল্পে। পরবর্তীতে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপের কারণে ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠে। পর্যটকদের হয়রানি রোধ ও সেবা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, পবিত্র মাহে রমজান ও তীব্র তাপদাহে মাস-দেড়েক পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত অনেকটা পর্যটক শূন্য বলা যায়। এতে হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ ও পর্যটক নির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যেও অচলাবস্থা বিরাজ করছিল। সৈকত জুড়েই ছিল কেবল সুনসান নিরবতা। ক্ষতির সম্মুখীন হবে এমন আশংঙ্কায় অনেক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিল। ছাঁটাই করা হয়েছিল বহু প্রতিষ্ঠান থেকে শ্রমিকদের। এই নিরবতা ভাঙতে প্রস্তুত এখন কক্সবাজার। এবার ঈদে লাখো পর্যটককে বরণ করে নিতে নতুন করে সাজানো হয়েছে পর্যটন নগরীকে। হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ অনেকটা শেষ পর্যায়ে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকারেরা পর্যটকদের সেবায় নতুন উদ্যোমে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কয়েক’দিনের কোলাহলমুক্ত সৈকতে ঢেউয়ের গর্জন ও বালিয়াড়ির বুকে ডালপালা ছড়ানো সাগরলতাও যেন পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সব মিলিয়ে যেন আনন্দ উচ্ছ্বাসের বহতা। এক সঙ্গে পাহাড়, সমুদ্র, নদী, ছড়া, ঝিরি-ঝরনার মেলবন্ধনে প্রকৃতির অপরূপ সব সৌন্দর্য দেখার সুযোগ শুধু কক্সবাজারেই রয়েছে। তাই বিশেষ দিন ও সরকারি ছুটিতে দেশ ও বিদেশ থেকে ভ্রমণপিপাসু মানুষ বেড়ানোর জন্যে এখানেই ছুটে আসেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুক্রবার থেকে টানা ছয়দিন সরকারি বন্ধ। এরমধ্যে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২ অথবা ৩ মে ঈদ হবে। এর আগের দিন মে দিবসের বন্ধ রয়েছে। সবমিলিয়ে বুধবার পর্যন্ত সরকারি ছুটি রয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার একদিন খোলার পর আবার দুইদিনের সাপ্তাহিক ছুটি। এ হিসেবে এবারের ঈদে টানা ছুটি পড়ছে। এ ছুটির দিনগুলোকেই পর্যটন ব্যবসায়ীরা এ বছরের মৌসুমের শেষ পর্যটক সমাগম বলে মনে করছেন।
কলাতলীর রোদেলা রেস্তোরাঁর পরিচালক মকবুল আহমেদ বলেন, ‘রমজান মাসে পর্যটক একেবারে শূন্যের পর্যায়ে ছিল। এ জন্য রেস্তোরাঁর কিছু ডেকোরেশন ও রং-চুনার কাজ করা হয়েছে।

সৈকতের বালিয়াড়ির কিটকট (চেয়ার-ছাতা) ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান জানান, মাস-দেড়েক ধরে কর্মচারীর বেতনও জোগাড় করতে পারিনি। টানা বন্ধের কারণে এবার ঈদের ছুটিতে ব্যবসা ভালো হবে বলে আশা করছি।
লাবণী পয়েন্টের জেলা পরিষদের মার্কেটের শামুক-ঝিনুক ব্যবসায়ী আমান উল্লাহ শুক্রবার বিকেলে দোকানে ধোলা-বালি পরিষ্কার করছেন। তার মতো এই মার্কেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকারেরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কক্সবাজার শহরের পাঁচ তারকা মানের হোটেল ও রিসোর্টগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ‘ইতোমধ্যে এসব হোটেলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। কিছু কিছু হোটেল পর্যটক টানতে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ ভাড়ায় ছাড় দিচ্ছেন।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, শহরে ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও রিসোর্টে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজারের মতো পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি রুম বুকিং হয়েছে। ঈদের আগে বাকি রুমগুলোও বুকিং হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রির্সোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, স্বাভাবিকভাবে রমজান মাসে ও গরমে পর্যটক কম থাকে। কিন্তু এবার আশা করছি এবারের টানা ছুটিতে লাখো পর্যটকের সমাগম হবে। এজন্য সবাই ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘পর্যটকের নিরাপত্তা ও সেবায় সমুদ্রসৈকত এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষণিক ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল রয়েছে। ঈদের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটক সমাগম ঘটবে-এ বিষয়টি বিবেচনায় পুলিশ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের জন্য খাবার পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাও দেওয়া হয়।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, ‘এবারের ঈদে লম্বা ছুটি পড়ছে, তাই পর্যটক সমাগমও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে পর্যটক সংশ্লিষ্ট সকলদের সঙ্গে সমন্বয় করছি, যাতে পর্যটকেরা ভালো সেবা পায় এবং নিরাপদে থাকে। হোটেলে-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় যেন অতিরিক্ত টাকা আদায় করা না হয়, অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়রানি যেন না হয়। এছাড়া পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সৈকতে এবং আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবে।