বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ২০২৪ সালে লবণের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ২৬ লাখ ১০ হাজার টন। তবে উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ টন। সে হিসেবে ঘাটতি দাঁড়ায় প্রায় ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৩৪৯ টন।
দেশে লবণের চাহিদার অর্ধেক বা প্রায় ১৩ লাখ টন শিল্প খাতে ব্যবহার হয়। কিন্তু তখন দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে চাহিদা কমে অর্ধেকে নেমে আসে। এ হিসাবে উৎপাদন ঘাটতি থাকলেও দেশে লবণের মজুদ রয়েছে সাড়ে তিন লাখ টনের বেশি।
কক্সবাজারের কৃষক ও মিল মালিকেরা গণমাধ্যমকে বলেছেন, দেশে এখনো লবণের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ করেই আমদানির তোড়জোড় শুরু করে বিসিক। এ খবরে লবণের দাম মণপ্রতি (৪২-৪৪ কেজি) ২০ টাকা পর্যন্ত কমে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম কমে যাওয়া ও আমদানির খবরে মৌসুম শুরুর এক মাস পেরিয়ে গেলেও চাষীরা মাঠে পুরোদমে উৎপাদন শুরু করেননি। সর্বশেষ ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৫০০ টন। অথচ ২০২৪ সালের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৫ হাজার টন। লোকসানের আশঙ্কায় চাষীরা মাঠে না নামায় এ বছর মৌসুমের শুরুতে লবণ উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে খোদ বিসিক কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ২০২৪ সালে লবণ উৎপাদনের জন্য বিঘাপ্রতি সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকায় জমি লিজ নিয়েছিলেন চাষীরা। তবে এ বছর দাম কমে যাওয়া ও মৌসুমের শুরুতে আমদানির অনুমতি দেয়ায় লিজ মূল্য কমতে শুরু করেছে। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন ১৫-২০ হাজার টাকায় জমি হস্তান্তর করেছেন মালিকরা। আবার লিজ মূল্য কম থাকায় অনেকে জমি দিচ্ছেন না। এতে আগ্রহ থাকলেও অনেক চাষী মাঠে যেতে পারছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লবণ চাষ ও উৎপাদনসংশ্লিষ্টরা পত্রিকাকে জানান, দেশে সংকট থাকলে সরকার লবণ আমদানির অনুমোদন দেয়। ২০২৪ সালে উৎপাদন সাড়ে তিন লাখ টনের মতো কম হলেও শিল্প খাতে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন লবণ ব্যবহৃত হয়নি।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, দেশে উৎপাদিত লবণের প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যবহার হয় বিভিন্ন শিল্প খাতে। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া, বস্ত্র, ডিটারজেন্টসহ বিভিন্ন শিল্প। বাকি ৫০ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত করে আয়োডিন মিশ্রণের মাধ্যমে ভোজ্য লবণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যদিও ভোজ্য লবণ প্রক্রিয়াজাত করতে ৩০-৪০ শতাংশ লবণ কমে যায়। এ হিসাবে ভোজ্য লবণের প্রকৃত ব্যবহার ৬-৭ লাখ টনের মতো।
বিভিন্ন সময়ে দেশে সংকটের ফলে বিশ্ববাজার থেকে আমদানির মাধ্যমে লবণ সংকট মোকাবেলা করেছে সরকার। এ বছর মাঠে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ থাকায় দাম কম। ফলে বিশ্ববাজার থেকে আমদানির পরিবর্তে দেশের লবণ ক্রয় ও প্রক্রিয়াজাত করা অধিক লাভজনক বলে মনে করছেন মিল মালিকরা। এ কারণে আমদানির সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে নিলেই ভালো হয়।
















































