লকডাউন

আজহার মাহমুদ :

জামাল মিয়ার মুখে হতাশা। চোখে-মুখে বিষণœতা। তার একমাত্র আদরের কন্যা ফাতেমার দিকে চেয়ে চেয়ে কাঁদছে। ফাতেমার বয়স সাড়ে সাত। সে গতকাল রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। এটা জামাল মিয়ার বুকে প্রচ- পীড়া দিচ্ছে

সকাল ৮টায় ঘুম ভেঙেছে ফাতেমার। ঘুম ভাঙামাত্র চোখে পড়লো বাবার মলিন মুখ। ছোট্ট ফাতেমার মনে হচ্ছে তার বাবাকে কেউ বকা দিয়েছে। ফাতেমাকে তার বাবা কখনও বকা দেয় না। মাঝে মাঝে মা বকা দিলেও বাবা আবার তার মাকে বকা দিয়ে দেয়। এতে ফাতেমা খুশি হয়ে যায়।

ফাতেমা বাবাকে বলে, বাবা তোমাকে কি কেউ বকা দিয়েছে?

জামাল মিয়া বলেন, না মা। কে বকা দেবে আমার মামুনির বাবাকে?

ফাতেমা কিছুক্ষণ ভাবতে থাকলো। তাহলে বাবার মন খারাপ কেন। সে আবারও বলে, তোমার মন খারাপ কেন বাবা?

জামাল মিয়ার বুক ফেটে কান্না আসছে। তার মেয়েকে কি বলবে বুঝতে পারছে না। তবুও ছোট্ট শিশুটিকে অসহায় বাবা বলে ফেলেছে, মাগো আমরা তো না খেয়ে মরে যাবো। ঘরে কোনো খাবর নেই। তাই মন খারাপ।

ফাতেমা বলেন, বাবা, তুমি দোকান খুললে তো টাকা পাবে। তোমাকে কত মানুষ টাকা দেয়। আমি নিজে দেখেছি। তুমি ওদের টাকা দিয়ে সব কিনো। তুমি লকডাউনকে আটকে রাখবে আমি আর আম্মু দোকান খুলে ফেলবো।

জামাল মিয়ার একটা চায়ের দোকান আছে। ছোটখাটো দোকান হলেও মানসম্মত খাবারের কারণে তার বিক্রি হতো প্রচুর। একমেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে তার বেশ সুন্দরভাবে চলে যায়। কিন্তু করোনা নামক একটি রোগের কারণে সারাদেশ লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। সব দোকান বন্ধ রাখতে হবে। আজ একমাস তার দোকান বন্ধ। এতো সবকিছু তার ছোট্ট আদরের মেয়েকে বুঝানো যাবে না।

গত ২০ দিন যাবত মেয়েকে লকডাউনের ভয় দেখিয়ে চকলেট কিনে দিচ্ছে না জামাল মিয়া। ফাতেমার কাছে লকডাউন মানে কোনো জন্তুর নাম। সে রাস্তায় আছে। তাই তার বাবা দোকান খুলতে পারছে না। আর সে চকলেট খেতে পারছে না। এবার হয়তো ফাতেমার ভাত খাওয়া নিয়েও সংশয় আছে। গতরাতেই সেই যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে জামাল মিয়ার সংসারে।