গতকাল ছিল বিশ্ব এইডস দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সারা বিশ্বের ঐক্য, এইডস প্রতিরোধে সবাই নিব দায়িত্ব’। এইডস নিয়ে আমাদের দেশে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় সুফল মিলেছে, ঝুঁকিপ্রবণ অবস্থান সত্ত্বেও দেশে এইডস রোগী তেমন বাড়েনি।
দেশে এখন পর্যন্ত এইডস রোগী ৭ হাজার ৩৭৪ জন, এর মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ১০৫ জন এইডস রোগীর সন্ধান মিলেছে মর্মে আমাদের উখিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন। উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সেবায় নিয়োজিত ক্লিনিক ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এইডস নির্মূলে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে মর্মে আমাদের সংবাদদাতার প্রতিবেদনে জানানো হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, একই সিরিঞ্জ দিয়ে মাদক গ্রহণকারীদের কাউন্সেলিং করায় সংক্রমণ কমেছে। অন্তঃসত্ত্বা মায়েদেরও এইচআইভি পরীক্ষা করা হচ্ছে। এইডস শনাক্ত হওয়া ১০৫ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এইডস সংক্রমণ বাড়ছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করা হচ্ছে। সরকারি তথ্য অনুসারে দেশে এইচআইভি (এইডস) রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। অক্টোবর ২০১৯ পর্যন্ত আক্রান্ত ৭৩৭৪ জন, এর মধ্যে মারা গেছেন ১২৪২ জন, দেশে সম্ভাব্য এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ১৪০০০।
দেশে এই রোগে সংক্রমণের হার ০.০১ শতাংশ। প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলির তুলনায় আমাদের দেশে সংক্রমণ কম হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝুঁকি বিদ্যমান। এইডস রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিস্কার না হলেও বর্তমানে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। এটি কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়-এটি সকলকে মনে রাখতে হবে। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি অবজ্ঞাসূচক মনোভাব না দেখিয়ে তাদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করা বাঞ্ছনীয়। সকল ক্ষেত্রে পরিমিত জীবনযাপন এবং যে সকল উপাদানের মাধ্যমে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে সে সব পরিহারে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। নিরাপদ যৌন মিলন, শেভিংয়ের সময় পৃথক ব্লেড ব্যবহার, নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়। একই সিরিঞ্জ-সুঁচ দিয়ে মাদক গ্রহণকারীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থেকে যায়। আমাদের দেশে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু জনগোষ্ঠী রয়েছে, তাদের জীবনযাত্রা নিয়ে পূর্ণ জরিপ চালানো এবং তাদের চিকিৎসার আওতায় আনা উচিত। এক সরকারি তথ্যে দেখা যায় ২০২০ সাল নাগাদ ১১টি হাসপাতাল হতে এন্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টারের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌনবাহিত রোগসমূহ এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এইচআইভি শনাক্তকরণ পরীক্ষা ও সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা কার্যক্রম আরো জোরদার করা প্রয়োজন।
২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে এইডস নির্মূলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থাগুলির সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। এইডস প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা ও সচেতনতা বৃদ্ধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নৈতিকতাপূর্ণ জীবনযাপন, এ রোগ প্রতিরোধে অপরিহার্য।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এইডস সংক্রমণ উদ্বেগজনক। রোহিঙ্গারা নানাভাবে ক্যাম্প ছেড়ে সংলগ্ন লোকালয়ও দেশের নানাস্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে রোগটি ছড়াতে পারে। শরণার্থীদের ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়