সুপ্রভাত ডেস্ক »
শুধু কক্সবাজার বা টেকনাফের উখিয়া ক্যাম্প নয়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ১১ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। এতে একদিকে নিরাপত্তার শঙ্কা তৈরি করছে, অন্যদিকে ঘটছে মাদকসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা-। এ ছাড়া সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা, যা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এসব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না গেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এসব বিষয় খতিয়ে দেখে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জ ও কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বরত একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের অন্যতম নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে উঠছে। রোহিঙ্গাদের নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়া ঠেকাতে মোবাইল নেটওয়ার্কের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে। এ ছাড়া অ্যাপস ভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমও নজরদারিতে আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
কক্সবাজার ছাড়াও চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনীতে জনসাধারণের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। আর এর পেছনে কাজ করছে স্থানীয় দালালরা, যাদের সহায়তায় রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
এসব অসাধু চক্রের সহায়তায় ইউনিয়ন পরিষদের সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করে দেশের বাইরে চলে গেছে অনেক রোহিঙ্গা। এ ছাড়া দেশ ছাড়ার সময় বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকেও গ্রেফতার করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের। দালালদের ইউপি সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট করে দেওয়ার ব্যবসা এখন রমরমা।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে ৩৩টি ক্যাম্প রয়েছে এবং নোয়াখালীর ভাসানচরে বসবাস করছে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আশ্রয়ের বিনিময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো এখন অপরাধের আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে ক্যাম্পগুলো থেকে। আধিপত্য বিস্তারে সন্ত্রাসী ও রাহাজানি হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। খবর বাংলাট্রিবিউন।
তারা বলছেন, নানা অভিযানের পরও রোহিঙ্গাদের অপরাধ ঠেকানো যাচ্ছে না। অপহরণ ও চাঁদাবাজির ঘটনায় নিহত হওয়ার বিষয়গুলো বেশ ভাবনায় ফেলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি বিবাদে জড়িয়ে নিহতের ঘটনাও বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে।
বাংলাদেশের সব জায়গায় বর্তমানে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ১১টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে নিরাপত্তা হুমকির সৃষ্টি করছে। রোহিঙ্গারা বিভিন্নভাবে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে গেছে। এসব বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি।
অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট বলছে, রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। সব ধরনের নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য টেকনাফ ও উখিয়ায় ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। দেশব্যাপী এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) কর্মকা- পরিচালিত হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যখনই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সন্ধান পাওয়া যায়, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কাজ চলমান রয়েছে।
অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস শাখার পুলিশ সুপার আসলাম খান বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা জঙ্গিগোষ্ঠী যাতে কোনও ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ বা অপতৎপরতার সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারে, এসব বিষয়ে নজরদারি রাখা হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রোহিঙ্গাদের অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশ থেকে কিছুদিন আগে জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের তাদের দলে ফেরানোর পরিকল্পনা ছিল। গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে, সেসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। ক্যাম্প থেকে বের হয়ে আসছে। তাদের ধরা কঠিন। কারণ, তারা বিভিন্ন ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে ক্যাম্প থেকে বের হয়েই দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবার চালান পৌঁছে দিচ্ছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রোহিঙ্গারা বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এসব রোহিঙ্গার অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পেছনে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ইন্ধন দিচ্ছে। এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে।