সুপ্রভাত ডেস্ক »
রোজার মাস সামনে রেখে খেজুরের বাজার সহনীয় রাখতে আমদানি শুল্ক ও অগ্রিম কর কমানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
গত রোববার এ বিষয়ে তৈরি করা এক প্রতিবেদনে ট্যারিফ কমিশন খেজুরের আমদানি শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ এবং অগ্রিম কর ১০ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার সুপারিশ করে। সেই সঙ্গে আমদানি পর্যায়ে খেজুরের ওপর থেকে ৫ শতাংশ আগাম করও আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পুরোপুরি মওকুফ করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
সুপারিশের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কাজ করছে বলে জানিয়েছেন এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (শুল্ক নীতি) মুকিতুল হাসান।
তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে আমাদের পর্যালোচনাসহ একটি সারাংশ তৈরি করেছি। সেটি অনুমোদনও হয়েছে। দ্রুতই হয়ত সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত জানাবে।’ খবর বিডিনিউজ।
বর্তমানে খেজুর আমদানিতে ৬৩ দশমিক ৬০ শতাংশ শুল্ক ও কর রয়েছে। এর মধ্যে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ১৫ শতাংশ, অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ, নিয়ন্ত্রণ শুল্ক ৩ শতাংশ এবং আগাম কর ৫ শতাংশ।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে শুল্ক কমানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ থাকায় বর্তমানে আমদানিকারককে ওই আয়কর সমন্বয়ে বেশি হারে মুনাফা করতে হচ্ছে। আসলে, আমদানি পর্যায়ে এ আয়কর সমন্বয় করার সুযোগ কম হওয়ায় এটি পরে খরচ হিসেবে বিবেচিত হয়।
খেজুর আমদানির পরে মূল্য সংযোজনের সুযোগ কম থাকায় অগ্রিম আয়কর ও ৫ শতাংশ আয়কর একদিকে ব্যবসার আর্থিক ব্যয় বৃদ্ধি করছে, অন্যদিকে আমদানিকৃত খেজুরের মূল্য বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
আমদানি কত, চাহিদাই বা কত
ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। এর মাঝে কেবল রোজার মাসেই চাহিদা থাকে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন। এ চাহিদার বেশিরভাগটা মেটে আমদানির মাধ্যমে।
এনবিআরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২—২৩ অর্থবছরে দেশে ৮৬ হাজার ৫৮১ টন খেজুর আমদানি হয়। সেজন্য আমদানিকারকদের ব্যয় করতে হয়েছে প্রতি কেজিতে গড়ে ৩৩৬ টাকা। বিশ্ব বাজারে ডলারের উচ্চ মূল্যের কারণে এ পণ্যের দাম পরের অর্থবছরেই বেড়ে যায়। এর সাথে যুক্ত হয় দেশের বিদেশি মুদ্রার সংকট। এর প্রভাব খেজুরেও পড়ে। ২০২৩—২৪ অর্থবছরে এ পণ্যের আমদানি হয়েছে ৮০ হাজার ৯১০ টন। প্রতি কেজিতে ব্যয় হয়েছে ৪৯৭ টাকা। বিশ্ব বাজারে দাম কিছুটা কমলেও চলতি অর্থবছরের আমদানি পুরোপুরি শুরু হয়নি। রোজা সামনে রেখেই মূলত আমদানি হচ্ছে এখন।
চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ২৮৯ টন খেজুর আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। সেজন্য ব্যয় হয়েছে কেজিতে ৪৩৩ টাকা। আমদানির এসব তথ্যে শুল্ক ও করের হিসাব যোগ হয়নি। যেহেতু আমদানি মূল্যের ওপর শুল্ক—কর পরিশোধ করতে হয়, সেহেতু বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশে তা আরো বেড়ে যায়। বাংলাদেশে যেসব খেজুর আসে তার অধিকাংশ আমদানি হয় সৌদি আরব, আরব আমিরাত, তিউনিসিয়া, মিশর, জর্ডান, ইরাক, ইরান এবং পাকিস্তান থেকে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দর বলছে, বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি সাধারণ মানের খেজুর বিক্রি হয়েছে সর্বনিম্ন ২৫০ টাকায়, এবং সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায়। এক বছর আগের একই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।